দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ড্রোন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এই সংঘর্ষ দুই দেশের পুরনো বৈরিতা ও সীমান্ত উত্তেজনার নতুন, দূরনিয়ন্ত্রিত ও জটিল রূপ প্রকাশ করেছে।
ভারত অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় ভূখণ্ড ও কাশ্মীরের তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, তারা ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ভারত এখনো এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েক দশক পুরনো টিট-ফর-ট্যাট কৌশল এখন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কারণ, উভয় পক্ষই মানবহীন প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করছে। ফলে যুদ্ধ এখন আর কেবল মানুষ বনাম মানুষ নয়, প্রযুক্তি বনাম প্রযুক্তির লড়াইয়ে পরিণত হচ্ছে।
পাকিস্তান জানিয়েছে, বুধবার থেকে ভারতীয় হামলায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৩৬ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে অন্তত ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। ভারত আরও জানিয়েছে, পহেলগামে হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা ৭ মে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তান ২২ এপ্রিলের পহেলগাম হামলায় তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
এদিকে, পাকিস্তান বলছে, করাচী, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে ভূপাতিত ভারতীয় ড্রোনগুলো ইসরায়েলের তৈরি হ্যারোপ, যেগুলোকে প্রতিরোধ করা হয়েছে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে। ভারত পাল্টা দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের কয়েকটি বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম নিষ্ক্রিয় করেছে, যার মধ্যে একটি লাহোরে অবস্থিত। তবে ইসলামাবাদ সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ড্রোন যুদ্ধ এখন এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। ভারত বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমকিউ-৯বি প্রিডেটর ড্রোন কেনার চুক্তি করেছে, যা ৪০ ঘণ্টা উড়তে পারে ও ৪০,০০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। পাকিস্তানের পক্ষেও আছে এক হাজারের বেশি ড্রোনের বহর, যার মধ্যে চীনা, তুর্কি ও দেশীয় প্রযুক্তির মডেল রয়েছে।
এই পরিস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়াকে এক অস্থির ও বিপজ্জনক ড্রোন ফ্রন্টলাইনে পরিণত করেছে। আন্তর্জাতিক মহল দুই দেশকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানালেও, প্রযুক্তির হাত ধরে সংঘাতের ধরন এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত ও জটিল হয়ে উঠেছে।