দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে টেকসই ও উৎপাদনশীল দুগ্ধ বাজার সৃষ্টিতে সহায়তা করবে গ্রিন ডেইরি প্রকল্প

ডেনমার্কের অর্থায়নে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে একটি টেকসই দুগ্ধ বাজার তৈরির লক্ষ্যে “গ্রিন ডেইরি পার্টনারশিপ ইন বাংলাদেশ- ক্রিয়েটিং এ সাসাটেইনেবল অ্যান্ড প্রডাকটিভ ডেইরি ভ্যালু চেইন মডেল ইন সাইথ-ওয়েস্ট বাংলাদেশ” বা গ্রিন ডেইরি বাংলাদেশ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। নারী ক্ষমতায়নের নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যকর দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশ-বান্ধব অনুশীলনের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষা এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।

ডেনমার্ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ডানিডা গ্রিন বিজনেস পার্টনারশিপ এর তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া বাংলাদেশ, বাংলাদেশি দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ ডেইরি, ডেনমার্কের দুগ্ধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আরলা ফুডস, ডেনমার্কের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসইজিইএস ইনোভেশন, ডেনমার্কের কৃষি ও খাদ্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক (আইডিআরএন) গ্রিন ডেইরি প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কনফারেন্স হল রুমে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া বাংলাদেশের কারিগরী সহায়তায় “প্রজেক্ট ইনসেপশন ওয়ার্কশপ- গ্রিন ডেইরি পার্টনারশিপ ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মশালায় আলোচকরা এ কথা তুলে ধরেন।

কর্মশালার প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার। সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, খুলনা এর পরিচালক ডা: নুরুল্লাহ মো: আহসান।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সেলিম রেজা হাসান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সলিপারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া বাংলাদেশের হেড অফ সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড প্রাইভেট এনগেজমেন্ট মোহাম্মদ মজিবল হক । গ্রিন ডেইরি প্রজেক্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ মাজেদুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধান অতিথি মোঃ ফিরোজ সরকার বলেন, “গ্রিন ডেইরি প্রকল্পের আরলা বিগ ফাইভ মডেলটি দুগ্ধ খামারিদের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই প্রকল্পের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দুগ্ধ খামারিদের আদর্শ অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করবে। এ মডেলের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্যর জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে।”

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডা: নুরুল্লাহ বলেন, “ দুগ্ধ খামারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করার ফলে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে দুধ উৎপাদন এবং সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে দুধের টেকসই বাজার না থাকার কারণে খামারিরা দুধের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। গ্রিন ডেইরি প্রকল্পের আরলা বিগ ফাইভ মডেলটি গবাদী প্রাণির খাদ্যের কার্যকারিতা, প্রয়োজন মাফিক সুষম খাদ্য, গাভীর বলিষ্ঠতা, বর্জ্র ব্যবস্থাপনা এবং জমির সুচারু ব্যবহার নিশ্চিত করতে দুগ্ধ খামারিদের সহায়তা করবে করবে। অন্যদিকে, ডেইরি হাবের মাধ্যমে দুগ্ধ খামারিরা দুধের নায্য দাম পাবেন এবং দুধ নষ্ট হওয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবেন।”

সভাপতির ভাষণে সেলিম রেজা হাসান বলেন, “গ্রিন ডেইরি প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা স্থানীয় পর্যায়ের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান এবং অনুশীলন বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে পারবো বলে আশা করছি। এই জ্ঞান বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ কমানো, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকর দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ দশ হাজার দুগ্ধ খামারিকে নিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ছোট আকারে যে প্রজেক্ট আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি তা সফল হলে আমরা এটিকে আরো বড় আকারে উন্নিত করতে সফল হবো। দুগ্ধ খামারিদের নিয়ে আমরা যে পরিকল্পনা করেছি তা বাস্তবায়ন করতে পারলে আরলা ফুডস এবং প্রাণ ডেইরির মাধ্যমে আমরা দুগ্ধজাত পণ্যের একটি কো-ব্রান্ড তৈরি করতে সক্ষম হবো। এই কো-ব্রান্ড হবে শতভাগ দেশীয় খামারিদের পরিশ্রমের ফসল।”

উল্লেখ্য, কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম, খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল, যশোর এর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সাতক্ষীরা এর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন। এছাড়াও খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রকল্প নির্ধারিত কর্ম এলাকার ১১টি উপজেলার নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ অফিসারবৃন্দ, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া বাংলাদেশ, প্রাণ ডেইরি, ডেনমার্কের দুগ্ধ, আরলা ফুডস, আইডিআরএন এর কর্মকর্তা এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।