দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

দেশের চোখ যমুনায়

8

রাজনীতির উত্তেজনা যখন চূড়ান্ত সীমায়, গুজব আর গুঞ্জনের স্রোতে যখন জাতি দিশেহারা, তখনই আজ শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় হবে এ বৈঠক।

এই বৈঠককে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে চরম কৌতূহল ও প্রত্যাশা। কারণ, গত বছরের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর শেখ হাসিনার সরকার পতনের মধ্য দিয়ে ৮ আগস্ট যাত্রা শুরু করে এই অন্তর্বর্তী সরকার। আর সেই সরকারের নেতৃত্বে দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সেই সরকারের কার্যকারীতা নিয়ে বেশ গুঞ্জন চলছে দেশব্যাপী। এছাড়া সংবেদনশীল বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে বেশ মন কষাকষি চলছে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।

আজকের বৈঠক দুটি হবে পৃথক সময়ে—সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপির সঙ্গে এবং রাত ৮টায় জামায়াতের সঙ্গে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে,সকালে একনেকের নিয়মিত বৈঠক শেষ করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

গত কয়েক দিনে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভেসে বেড়ানো গুজব, পদত্যাগ দাবি, সেনাপ্রধানের বক্তব্য, এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো নানা বার্তার পেছনে থাকা বাস্তবতাই আজকের এই বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানা যায়, দলের মহাসচিব বর্তমানে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে থাকায় বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

এর আগে, বৃহস্পতিবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আমির শফিকুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনের নামে অতীতে যা হয়েছে, তা তামাশা। এমন নির্বাচন চাই, যেখানে জনগণের মত প্রতিফলিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের প্রতিপক্ষ নন, তিনি অভিভাবক।

বিএনপির পক্ষ থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদবলেন, ১৯ মে থেকে সাক্ষাতের চেষ্টা করেও বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। সরকারের ভেতরের উচ্চাভিলাষী গোষ্ঠী বিএনপিকে প্রতিপক্ষ ভাবে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আবেগের বশে এমন সিদ্ধান্ত হলে জাতি বিকল্প খুঁজে নিতে পারবে।

রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে কয়েকদিন আগে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য। সেখানে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেন। এছাড়া করিডোর ইস্যুতেও কথা বলেন জেনারেল ওয়াকার।

এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন এমন খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। সেসময় নাহিদ বলেন, স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার…..। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমিতো এভাবে কাজ করতে পারবো না। তো রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো ।

এরপরই ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী তৈয়্যবের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না। এমন পোস্ট প্রথমে আশাবাদ সৃষ্টি করলেও পরে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়ায় নতুন করে গুঞ্জনের জন্ম হয়।

এই মুহূর্তে দেশের দৃষ্টি যমুনার দিকে। আজ রাতের বৈঠকের পর সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক আসলে কেমন যাচ্ছে সে বিষয়টি কিছুটা হলেও পরিস্কার হতে পারে। একই সাথে আজ রাতেই আসতে পারে নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.