দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

জেল পলাতক ৯ জঙ্গিরা এখনও অধরা

32

গত বছর জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সারাদেশে ১৬টি কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা ছাড়াও কারাগার থেকে পালিয়ে যায় অনেক কয়েদি এবং লুট হয় আগ্নেয়াস্ত্র। ১৬টি কারাগারের মধ্যে পাঁচটি কারাগারে বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে। কারাগার থেকে বেরিয়ে যায় প্রায় আড়াই হাজার বন্দি এবং এদের মধ্যে ছিল জঙ্গিও। এসব পলাতকের মধ্যে কয়েদি ছাড়াও নয় জঙ্গি এখনও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েনি।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৯০০ বন্দি ফিরে এসেছেন। তবে এখনো ৬২০ জন বন্দির ধরা পড়েনি।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে জেল থেকে পলাতক জঙ্গিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনো ৯ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তারা হলেন, আব্দুল মালেক, আব্দুল মতিন, আজিজুর রহমান পলাশ, আমির হোসেন, নুরে আলম, নাছির হোসেন, জাহাঙ্গীর শওকত জুয়েল, সাগর আহম্মেদ ও মহিউদ্দিন নাইম।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সভাশেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। তবে উন্নত দেশের মানদন্ডে এখনও যেতে পারিনি। আপানাদের জানা আছে, গতবছর সারাদেশের বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র বেহাত হয়েছে। সেই আস্ত্রগুলোও উদ্ধার না হওয়ার পর্যন্ত একটু …।

গত বছর জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামিদের মধ্যে ছিল ৮৪ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। পারিবারিক হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সহিংসতা, অস্ত্র চোরাচালান ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন তারা। জানা গেছে,এখন পর্যন্ত ৬২০ জন পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ৯ জঙ্গি এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ডের চার আসামি রয়েছেন।

জানা গেছে, যেসব কয়েদি ও হাজতি কারাগারে স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছেন, তাদের সাজা কমানো যায় কি না সে বিষয়টি ভেবে দেখছে কারা কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক বন্দি হামলার ভয়ে বেকায়দায় পড়ে কারাগার থেকে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিছু বন্দি কারাগারে হামলা ঠেকাতে কারারক্ষীদের সহযোগিতা করেছেন। তাদের সাজা মওকুফের বিষয়টি আলোচনায় আছে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেক কারারক্ষী নিরাপত্তার ভয়ে কারাগার ছেড়ে চলে যান। এতে কারাগারের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে পড়ে। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের এই ৬৮টি কারাগারে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা এখন আগের চেয়ে নিরাপদ।

কারা অধিদপ্তর জানায়, গত বছরের ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়েছেন একদল লোক। হামলাকারীরা কারাগারে ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কারাগার থেকে চার শতাধিক আসামি পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কারাগার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই অস্ত্র নিয়েই আসামিরা সংঘাত-সংঘর্ষে যোগ দিয়েছেন। হামলাকারীরা জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে।

প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সদস্যরা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলখানা মোড়ে হামলাকারীরা জড়ো হতে থাকেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জেলা কারাগারের সামনে মসজিদ গেটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় জেলখানার ভেতর থেকে হামলাকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে তারা জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে গিয়ে ভাঙচুর করে ও আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। এ সময় কারারক্ষীরা প্রাণভয়ে প্রধান ফটক খুলে দিলে হামলাকারীরা ভেতরে গিয়ে ফের ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেলের তালা ভেঙে আসামিদের বের করে নিয়ে আসে। জেলাখানার ভেতরেও আগুন ধরিয়ে দেন তারা। জেলা কারাগারের নিরাপত্তারক্ষীদের অস্ত্র ও মোবাইল ফোন লুট করে তাদের একটি কক্ষে আটক রাখা হয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ওই কারাগারে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে কারারক্ষীরা গুলি ছুড়লেও হামলাকারীরা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

সূত্র জানায়, একপর্যায়ে ওই কারাগার থেকে প্রায় ৮২৫ জন বন্দি পালিয়ে যান। এ ছাড়া গত ৫ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একই দিন শেরপুর জেলা কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে প্রায় ৫৮০ জন বন্দি পালিয়ে যান। গত ৬ আগস্ট হামলার ঘটনা ঘটে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। এ ছাড়া ৭ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে ৫৫ জন বন্দি পালিয়ে যান।

সূত্র জানায়, দেশের ১৬টি কারাগারে হামলার ঘটনায় প্রায় ৯৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে বিভিন্ন অভিযানে ৬৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে এখনো ২৫টি অস্ত্রের হদিস মেলেনি। তবে অস্ত্রগুলো দ্রুত উদ্ধার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বরাষ্ট্ উপদেষ্টা জানান, পলাতক ব্যক্তিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ এসব বন্দির নামসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দেশের বিমানবন্দর ও সব স্থলবন্দরে পাঠিয়েছে, যাতে তারা বিদেশে পালাতে না পারে।

সূত্র দ্য নিউজ

Leave A Reply

Your email address will not be published.