দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

জুলাই সনদে সই হচ্ছে না আজ, মেয়াদ বাড়ছে ঐকমত্য কমিশনের

77

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্যতম আলোচ্য রাজনৈতিক উদ্যোগ ‘জুলাই সনদ’ চলতি মাসেই চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা থাকলেও, তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার জুলাই মাসের শেষ দিন হলেও ঐ সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই আদায় করা যাচ্ছে না। খসড়া সনদ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ এবং আটটি মৌলিক সংস্কার বিষয়ে এখনো ঐক্যমতে না পৌঁছানোর কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আজ (৩১ জুলাই)। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং এনসিপির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মতানৈক্য থাকায় আজ একটি সমন্বিত ও নতুন খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে তুলে দেবে কমিশন। এই প্রেক্ষাপটে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় দলগুলোর সঙ্গে আবার সংলাপে বসবে কমিশন।

গতকাল বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ২২তম বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার তালিকা ইতোমধ্যে তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যে সমন্বিত খসড়া হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।

গত বছরের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়, যা সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার নিয়ে কাজ করে। ফেব্রুয়ারিতে তারা প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে এসব সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। ছয়টি কমিশনের সুপারিশকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়—একটি অংশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে, অন্য অংশের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে চলছে দলীয় আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়।

কমিশন জানায়, এখন পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এসব বিষয় হলো—প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা ১০ বছর, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, সংসদীয় কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সংক্রান্ত বিধান, হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ ও নিম্ন আদালত উপজেলা পর্যায়ে স্থানান্তর, জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, নির্বাচন কমিশনের গঠন পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধানের সংস্কার।

অন্যদিকে, এখনো যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, তার মধ্যে রয়েছে—চারটি সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ও নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সংলাপ চললেও সাতটি আলোচ্য বিষয়ের একটিতেও দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। মূলত নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা চলে। স্ক্রিনে আলোচনার জন্য দেখানো সাতটি বিষয় ছিল—নারী প্রতিনিধিত্ব, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, ন্যায়পাল নিয়োগ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্রের মূলনীতি।

আলোচনায় কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মৌলিক অধিকারের বিষয়ে দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হলেও সংবিধানে এ বিষয়ে কী ধরনের সংশোধনী আনা হবে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে। বিএনপির সুপারিশ ও আপত্তিগুলো আলোচনা অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ।

দলগুলোর পক্ষ থেকে বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অধিকাংশ সংস্কার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে, বাকিগুলো নিয়েও যথাযথ আলোচনা চলছে। তাই ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এলে বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। না হলে এতদিনের আলোচনা অর্থহীন হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও তিনটি উপায়ে আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব—লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, গণভোট এবং রেফারেন্ডাম।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে, এতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইনিভাবে এ সনদ বাস্তবায়ন না হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তিনি।

সব মিলিয়ে, আজকের দিনেও জুলাই সনদে চূড়ান্ত ঐকমত্য না হওয়ায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.