পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে জোর বিতর্কের মধ্যেই এক বাংলাদেশি তরুণের ভোটার হিসেবে নাম থাকা নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, নিউটন দাস নামের ওই যুবক একদিকে যেমন কাকদ্বীপ বিধানসভা আসনের নিবন্ধিত ভোটার, তেমনি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আলোচিত জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
সোশাল মিডিয়ায় নিউটনের আন্দোলনমুখর ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি সামনে আসে। যদিও তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেননি।
এক ভিডিও বার্তায় নিউটন বলেন, “২০২৪ সালে পারিবারিক সম্পত্তির বিষয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে চলমান একটি বিপ্লবে জড়িয়ে পড়ি। তবে আমি ভারতের নাগরিক এবং ২০১৪ সাল থেকে কাকদ্বীপের ভোটার।”
তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালে তার ভোটার কার্ড হারিয়ে গেলে স্থানীয় বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরার সহায়তায় তিনি ২০১৮ সালে নতুন কার্ড সংগ্রহ করেন।
তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মন্তব্য করেন নিউটনের চাচাতো ভাই তপন দাস। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ওর জন্ম বাংলাদেশেই। মহামারীর পরে জমিজমা বিক্রি করতে এ দেশে এসেছিল, পরে আর ফেরেনি। দুই দেশেই ভোট দিয়ে থাকে।”
তার দাবি, “এটা সম্পূর্ণভাবে ওরই ভুল।”
এই ঘটনার সূত্র ধরে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করে বলছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, “পশ্চিমবঙ্গে লাখ লাখ বাংলাদেশি ভোটার হয়ে গেছে। এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সদস্যও এর আগেও ভোটার তালিকায় ছিল।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিউটনের ঘটনাকে “এগিয়ে বাংলা মডেলের আরও একটি উদাহরণ” বলে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, “যে যুবককে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে লাঠি হাতে দেখা গেছে, সে-ই এখন পশ্চিমবঙ্গের বৈধ ভোটার!”
তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বের কথা তুলে ধরেছে।
দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, “ভোটার তালিকায় অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। রাজ্য সরকার নিজের কাজ ঠিকভাবেই করছে।”
প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকায় অনিয়ম নিয়ে এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দাবি করেন, অন্য রাজ্যের ভোটারদের ইপিআইসি নম্বর পশ্চিমবঙ্গের ভোটারদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
তবে বিজেপির পাল্টা দাবি, এ ধরনের অনিয়ম ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়াতেই ঘটছে।
নিউটন দাসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে আবারও প্রশ্ন উঠেছে ভোটার যাচাই প্রক্রিয়া এবং ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে। এই ইস্যু ঘিরে রাজনৈতিক তোলপাড় যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।