দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র সমাধান

62

দেশজুড়ে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় নির্বাচনকে ‘একমাত্র সমাধান’ হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন। প্রতিদিন রাজধানীর রাজপথে চলছে ছোট-বড় নানা রকম বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। একদিকে যেমন রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক তৎপরতা, অন্যদিকে সাধারণ জনগণও নিজেদের স্বার্থ ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন।

খুলনা, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনগরী, সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় অলিগলি থেকে শুরু করে চায়ের দোকান ও পাড়া-মহল্লার আড্ডাগুলোতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে—“কবে হবে জাতীয় নির্বাচন?” এবং “নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে?” খুলনার সাধারণ মানুষ মনে করছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচনই পারে এই রাজনৈতিক জটিলতা ও অস্থিরতা দূর করতে।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জনমনে উদ্বেগগত কয়েক মাসে দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। একের পর এক বিক্ষোভ, দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান, প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন সংগঠনের বিরোধ-সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। এতে করে সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

খুলনার রোডে অবস্থানরত এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, “আমরা চাই একটা স্থিতিশীল পরিবেশ। সারাক্ষণ বিক্ষোভ আর সংঘাত নিয়ে তো দেশ চলতে পারে না। তাই আমাদের চাওয়া, দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হোক, তাও যেন সবার অংশগ্রহণে ও গ্রহণযোগ্য হয়।”

খুলনায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ খুলনা জেলার দৌলতপুর, খালিশপুর, সোনাডাঙ্গা ও রূপসা এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছোট ছোট দল বেঁধে মানুষ আলোচনা করছে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী নাগরিকরাও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী আলোচনা করছেন।

খালিশপুর এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখি আন্দোলনের খবর। ঢাকায় তো দিন নেই, ঘণ্টায় ঘণ্টায় কর্মসূচি। খুলনাতেও মানুষ বসে নেই। আমরা চাই, সব পক্ষ মিলে একটা ফয়সালায় আসুক। সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, যেন জনগণ স্বস্তিতে থাকতে পারে।”সামাজিক ও সাংগঠনিক সক্রিয়তারাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সংগঠনও জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জোরালো করেছে। তাঁদের মতে, নির্বাচন ছাড়া বর্তমান সংকটের কোনো গ্রহণযোগ্য বা স্থায়ী সমাধান নেই। অনেক সংগঠন ইতিমধ্যে বিভিন্ন আলোচনাসভা, সেমিনার ও র‌্যালির মাধ্যমে তাঁদের দাবির কথা তুলে ধরছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সালেহা পারভীন বলেন, “রাজনীতির ময়দানে সংকট থাকতেই পারে, তবে তার সমাধান হতে হবে সাংবিধানিক পথে। নির্বাচনই সেই পথ। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য এবং সবার অংশগ্রহণে। না হলে সংকট আরও বাড়বে।”নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও প্রস্তুতিনির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে মাঝে মাঝে কিছু প্রস্তুতির বার্তা এলেও অনেকের মনেই প্রশ্ন—এই পরিস্থিতিতে আদৌ কীভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর খুলনা জেলা সম্পাদক অ্যাড. কুদরত-ই খুদা বলেন, “আমরা চাই, নির্বাচন কমিশন সব দলের সঙ্গে সংলাপ করুক। আস্থা তৈরির কাজটা আগে করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষও নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে।”তরুণদের সক্রিয় আগ্রহজাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী দেখা যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্মকে। তাদের বিশ্বাস, ভোটের মাধ্যমে তারা পরিবর্তন আনতে পারবে। অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

খুলনার এক তরুণ সমাজকর্মী আরিফা সুলতানা বলেন, “আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরা রাজনীতিতে আগ্রহী হচ্ছে, কারণ আমরা চাই পরিবর্তন। জাতীয় নির্বাচন সেই পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হতে পারে। তবে তার আগে দরকার একটি নিরাপদ পরিবেশ।” পরিণতি ও করণীয়বর্তমান প্রেক্ষাপটে একথা স্পষ্ট যে, জাতীয় নির্বাচন এখন কেবল রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক দাবি। জনগণের স্বার্থ, দেশের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সবাই চাইছেন একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।সরকার, বিরোধী দল, নির্বাচন কমিশন এবং সুশীল সমাজ-সব পক্ষের উচিত এখন দায়িত্বশীল আচরণ করা।

পরিস্থিতি শান্ত রেখে আলোচনার মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করাই হতে পারে দেশের ভবিষ্যতের জন্য শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ।

শেষ কথা:রাজনীতি যখন অচল, তখন সমাধান রাজনীতিতেই। আর রাজনীতির শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তি হচ্ছে নির্বাচন। সুতরাং, খুলনা থেকে ঢাকা—সবার মুখে এখন একটাই কথা, “দ্রুত হোক জাতীয় নির্বাচন—সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষভাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.