মোংলা প্রতিনিধি :জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বন্দরের প্রশাসনিক ভবন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। র্যালীটি বন্দর জেটির গেইটে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের মুল কার্যক্রম শুরু হয়। বন্দর জেটির অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোঃ শফিকুল ইসলাম সরকার, সদস্য (অর্থ) ও পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আবেদ হোসেন (যুগ্মসচিব), সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান, পরিচালক (বোর্ড) কালাচাঁদ সিংহ, হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, কর্নেল মো: ফিরোজ ওয়াহিদ, এছাড়া বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, বন্দরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারী।
অনুষ্ঠানে বন্দরের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে সর্বোচ্চ জাহাজ কয়লা, মাসুল প্রদাণ, সার, সাধারন পণ্য, গ্যাস, কন্টেইনারবাহী জাহাজ আনয়নকারী, গাড়ির জাহাজ, মালামাল হ্যান্ডলিংসহ ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২৯ টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদাণ করা হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান জানান, বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ০৫ (পাঁচ) মাসে জাহাজ এসেছে ৩৫৬ টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩,৮৫৪ টিইউজ, গাড়ি আমদানি ৪,১৩৯ টি, পন্য আমদানি-রপ্তানি ৪৪ লক্ষ টন। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘন্টায় ২৪ টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ০৫ টি জেটিতে একই সাথে ০৫ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সুসম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ এবং রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহনকে সহজতর এবং দ্রুত করবে। মোংলা বন্দরে ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে Port Reception Facility (PRF) প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে যা উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলে তেলবাহী কোনো জাহাজ বা ট্যাংকার হতে দুর্ঘটনা বশতঃ পানিতে তেল নিঃসরণ হলে তেল অপসারণকারী ভেসেলের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করে নদী ও সামুদ্রিক পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করার সক্ষমতা অর্জন করবে মোংলা বন্দর। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ী, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাকড়া, ক্লে, টাইলস, রেশমী কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
উল্লেখ্য, ১লা ডিসেম্বর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পিডি-৪(৪৮)/৫০/১ সংখ্যক গেজেট নোটিফিকেশন বলে ১লা ডিসেম্বর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে চালনা পোর্ট নামে এ বন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি এ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরবর্তীতে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।