ছাত্রদল জুলাই-আগস্টের স্প্রীটকে ধারণ করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করতে চায়- ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াহিয়া
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশে আমরা পদার্পন করেছি। সেই বাংলাদেশে যদি আমরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বলি, ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। তাহলে হবে? বিগত জুলাই-আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না আনলে রাজনীতি করাটা কঠিন হবে। ছাত্রদল শুরু থেকেই ইতিবাচক রাজনীতি করে আসছে। সংকটটা তখনই প্রকট হবে, যদি আপনি জুলাই-আগস্টের স্প্রীটের সঙ্গে না যান। ছাত্রদল সবসময় জুলাই-আগস্টের স্প্রীটকে ধারণ করে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করতে চায়। আমরা একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ চাই। যেখানে সব দলের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। ছাত্রলীগের মতো একটি দলই রাজনীতি করবে বাকীদের যদি রাজনীতি করতে না দেন, তাহলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, সেই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার ( ১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)- এ একটি চরম অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এখানে সরেজমিনে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছি।
সর্বপ্রথম আমরা আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করার সাথে উক্ত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব ন্যাক্কারজনক হামলায় ও এসবের উস্কানিতে জড়িত যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
তবে উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে অনলাইনে ও অফলাইনে নিরন্তর অপপ্রচারের মাধ্যমে সত্য ঘটনাকে চাপা দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে যে মিথ্যা অপবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তার জবাবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাদের সংগঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করাটি অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার ভেতরে যাবার আগে বলে রাখা উচিৎ, যদিও আমরা এখানে তদন্তের দায়ভার নিয়ে এসেছি এবং মোটাদাগে একটি প্রতিবেদন আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের নিকট জমা দিবো। কিন্তু তার পরেও প্রশাসন কর্তৃক আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত এইসব ঘটনার পুরো সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ সম্ভব হবে না।
তবে ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ও ছবি/ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি সে অনুযায়ী ১৮ তারিখের অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ (২০২১-২২ সেশন), ইফাজ (২০২২-২৩ সেশন) ও ইউসুফ (২০২২-২৩ সেশন) নামক তিন জন ছাত্রদল সমর্থকের উপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে। সেই মিছিল থেকেই ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কতিপয় মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিতে তেড়ে যেয়ে হামলার সূচনা করে। ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। যার জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের উপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যাক্কারজনক সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই হাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানোর কোন কারণও তাদের নেই।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সহিংসতায় ছাত্রদলের সমর্থকেরা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাঁদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং যেহেতু কুয়েটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোন কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখনও পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি। সেহেতু তাঁরা তিনজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোন ঘটনাকে “ছাত্রদলের হামলা” শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হবে সর্বৈব ভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।
এ সময়ে অনন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শ্যামল মালুম, সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, সহ-সভাপতি সাফি ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাহেদ হাসান, হাসানুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, সোহেল রানা, নূরুজ্জামান চন্দন প্রমূখ।