চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করছি: নাহিদ ইসলাম
সাতক্ষীরায় পথসভায় এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি; সংস্কার, নতুন সংবিধান ও জুলাই গণহত্যার বিচারের
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন , ‘‘আমরা সংস্কার চেয়েছি,জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি। কিন্তু একটি পক্ষ আমাদের চাওয়ার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাচ্ছে,যারা পুরনো বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতে চায়। তারা ভেবেছিল ২/৩ আসনের লোভ দেখিয়ে আমাদেরকে কিনে নেবে,কিন্তু জুলাই বিপ্লবীদের কেনার সাধ্য কারো নেই।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবার দেশজুড়ে পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।”
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরার শহীদ আসিফ চত্বরে আয়োজিত এক পথসভায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দেশ সংস্কার, নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন। একইসাথে তিনি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানান।
এনসিপির সাতক্ষীরা জেলা শাখা আয়োজিত এই পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা সংস্কার চেয়েছি, জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল পুরাতন বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতে চায়। তারা চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসকে টিকিয়ে রেখে দেশকে শোষণ করতে চায়। গণঅভ্যুত্থানের পর এত মানুষের জীবনদানের পর তারা যদি মনে করে পুরাতন রাজনীতি করবে, বিষয়টি এত সহজ হবে না। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনও জেগে আছে।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তারা একটি জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ পুনর্গঠনের জন্য আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছিলেন। “আমরা তাদের বলেছিলাম আসুন, সরকার গঠন করি, দেশকে পুনর্গঠন করি। কিন্তু ক্ষমতার ভাগাভাগি ছাড়া তাদের কোনো সায় পাওয়া যায়নি। তারা ৩ মাস বা ৬ মাসের মধ্যে ভোট চেয়েছিল, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতায় যাওয়া।”
আলোচনার পথ এখনও খোলা আছে জানিয়ে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “দেশ সংস্কারে আমাদের দরজা এখনও খোলা। এবার দরজা বন্ধ হলে জনগণ আপনাদের ছাড় দেবে না।”
পথসভায় নাহিদ ইসলাম চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চাঁদাবাজদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। শেখ হাসিনাকে দিল্লি পাঠাতে পেরেছে যে দেশের মানুষ, তারা চাঁদাবাজকে ভয় পাবে না। আমি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এলাকায় এলাকায় জিহাদ ঘোষণা করছি।” তিনি চাঁদাবাজদের নির্মূলে পাড়া-মহল্লায় কমিটি গঠন, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সাতক্ষীরা জেলার সমন্বয়ক কামরুজ্জামান বুলুর সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক মেজবাহ কামাল । মঞ্চে স্লোগান দেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। পথসভার আগে কেন্দ্রীয় নেতারা সাতক্ষীরায় জুলাই বিপ্লবে আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সভা শেষে শহীদ আসিফ চত্বর থেকে একটি পদযাত্রা বের হয়ে শহরের নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে নিউমার্কেট এলাকায় আল বারাকা হোটেলের দ্বিতীয় তলায় দলটির জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়।
সাতক্ষীরার মানুষের বঞ্চনার কথা তুলে ধরে নেতারা বলেন, “আপনারা ভুক্তভোগী। এই দেশকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। ৫৪ বছরে সাতক্ষীরায় রেল লাইন আসে নাই। সাতক্ষীরার শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ এখনও ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পায় না।” দলটি প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা সাতক্ষীরার মানুষের জন্য কাজ করবে। “আমরা কি সাতক্ষীরার উন্নয়ন চাই? আমরা কি সাতক্ষীরার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন চাই? আমরা কি সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন চাই?”
একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে দলটি জানায়, “আমাদের জলবায়ু আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। আমাদের সুন্দরবন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে তাকাতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি সাতক্ষীরার মানুষ এবং এই উপকূল রক্ষার জন্য কাজ করবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রচলিত ধারার রাজনীতির বাইরে এসে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। বক্তারা বলেন, “ঐক্যবদ্ধ হোন, নতুন করে প্রস্তুতি নিন। বাংলাদেশকে ইনসাফের ভিত্তিতে, দুর্নীতি ও দুঃশাসন বিরোধী রাজনীতির পথে নিতে হবে।”
তারা আরও বলেন, “যে কারণে আমাদের শহীদেরা রক্ত দিয়েছিলেন, ছাত্র-জনতা শক্তি দিয়েছিল, সেই সকল শক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের যে মর্যাদা ও অধিকার, তা রক্ষা করতে হবে।”