দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

ঘূর্ণিঝড় ডানা’র প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি, দমকা হাওয়া

প্রস্তুত রয়েছে ৮৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয় কেন্দ্র

37

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ডানা’র প্রভাবে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ভোর রাত থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকাসহ জেলার সর্বত্রই থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে মাঝে মাঝে বইছে দমকা হাওয়া। উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ডানা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি মোকবেলায় ও দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য সাতক্ষীরার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

শ্যামনগরের আফজাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে বইছে দমকা হাওয়া। উপকূলের সব নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তবে এখনো পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।

শ্যামনগর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুল আলম জানান, সব চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলার উপকূলীয় শ্যামনগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবেলায় উপজেলার সরকারি ১০২টিসহ মোট ১৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুদ রাখা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য দুই হাজার ৯৮০ জন সিপিপি সদস্যসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছেন।

এদিকে উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ গুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও রোল সহ অন্যান্য অনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও ফিল্টার, জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, তার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরায় ৩০৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের ৩টি পয়েন্টে ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ব্যাগ, ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের উপর নজর রাখা হয়েছে। আমাদের লোকজন তাদের স্ব স্ব এলাকায় কাজ করছেন। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত রযেছেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরায় ৮৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবিলার সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ৫ লাখ টাকার গো খাদ্য, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৮০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ অর্থ প্রায় ৭ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, ট্রলার ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: খুলনা গেজেট

Leave A Reply

Your email address will not be published.