কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বাগালী সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের ইট উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত, যা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার আবেদন করেও কোনো সুফল মেলেনি। চরম দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কৃষক, রোগীসহ হাজারো মানুষকে।
মরণফাঁদে রূপ নিয়েছে সড়কটি:
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার ব্যবসায়ীক প্রানকেন্দ্র ঘুগরাকাটি হাট ও বাজার থেকে শুরু করে ঘুগরাকাটি ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং বাগালী লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটারের এই রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই সড়কটি পাকা করা হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তগুলোতে পানি জমে চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এই রাস্তা দিয়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জায়গীর মহল যাওয়া যায়। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে নেওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
দুর্ভোগে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা:
এই সড়কের পাশেই রয়েছে লালুয়া বাগালী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসা। প্রতিদিন নদী পার হয়ে শত শত শিক্ষার্থীকে এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। একাধিক শিক্ষার্থী দুঃখ প্রকাশ করে জানান, “রাস্তায় পা রাখলেই দেখি বড় বড় গর্ত। প্রায়ই গর্তে পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়, যার কারণে অনেক সময় স্কুল থেকে ফিরে আসতে হয়। সময়মতো বিদ্যালয়ে পৌঁছানো আমাদের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।”
জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস, কাজের দেখা নেই:
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই দুর্ভোগ চললেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এক পল্লী চিকিৎসক আক্ষেপ করে বলেন, “ভোটের সময় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দেন, কিন্তু পরে আর কাজ করেন না। আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই।”
ইউপি সদস্য শাহ আলম জানান, “বাগালী লঞ্চঘাট থেকে ঘুগরাকাটি বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা হয়।”
মাষ্টার আসমাউল হোসেন সহ লালুয়া বাঙ্গালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, “দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই রাস্তাটি জরাজীর্ণ। চরম দুর্ভোগের শিকার এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ। বিশেষ করে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।” জনসাধারণের প্রাণের দাবি, এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হোক। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।