খুলনার রাজনীতিতে বিএনপির সক্রিয় পদে নেই বহুদিন। সংসদ সদস্য হিসেবেও দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিত। তবু রাজনৈতিক মাঠে আলোচনা আর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলটির দুই প্রবীণ নেতা মো. নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং আলী আজগর লবী। দলীয় পদ-পদবির বাইরে থেকেও এদের প্রতিটি কার্যক্রম ঘিরে রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রশ্ন, জন্ম নিচ্ছে জল্পনা-তাঁরা কি আবার নির্বাচনী মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনা এসব প্রশ্নের পেছনে জোরালো ভিত্তি তৈরি করেছে। খুলনার বিএনপির যেকোনো বড় কর্মসূচিতে মো. নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সরব উপস্থিতি এখন একটি নিয়মিত চিত্র। নিজস্ব বহর, অনুসারীদের জমজমাট উপস্থিতি, মিছিল, শোডাউন-সবমিলিয়ে তাকে ঘিরে যেন এক ভিন্ন আবহ তৈরি হয়। যদিও তিনি এখন আর দলের কোনো সাংগঠনিক পদে নেই, তবে কর্মীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব রয়েছে আগের মতোই দৃশ্যমান। এর আগে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসাবে খুলনা-২ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এই নেতা।
অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর লবীও সম্প্রতি আবার সক্রিয় হচ্ছেন খুলনার রাজনীতিতে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এবং তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল খুলনা সফরে এলে, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন লবী নিজে। পুরো সফরে তার উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। শুধু তাই নয়, পরদিন শুক্রবার জেলার ফুলতলার জামিরায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলী আজগর লবী। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেন অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য, তুলে ধরেন দলের আদর্শ ও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। তিনি ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে খুলনা-২ আসন থেকে বেগম খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া আসন থেকে উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
খুলনার প্রবীণ রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, পদে না থেকেও এই দুই প্রবীণ নেতার ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা শুধু স্মৃতি রোমন্থনের অংশ নয়, বরং এটিকে তাদের নতুন করে সংগঠনের ভেতরে অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অনেকে মনে করছেন, বিএনপি যদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তবে খুলনায় এই দুই অভিজ্ঞ নেতাকে প্রার্থী হিসেবে সামনে আনার চিন্তা ভাবনা থাকতে পারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।
তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। খুলনার এক বিএনপি কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নজরুল ইসলাম মঞ্জু ভাই খুলনার রাজনীতিতে এখনও বড় একটা নাম। তিনি মাঠে থাকলে কর্মীরা উজ্জীবিত থাকেন। একইভাবে লবী ভাইয়ের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো দরকার। তারা নির্বাচন করলে মাঠে আমরা জোরেশোরে নামতে পারব।”
তবে এসব আলোচনার পেছনে এখনো পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। বিএনপি খুলনায় কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি, এমনকি আলোচনাও প্রকাশ্যে আনেনি। তবে তাদের সাম্প্রতিক সক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমের ভিন্নমাত্রা এই ধারণা জোরদার করছে যে, প্রবীণ এই দুই নেতা রাজনীতির ‘ব্রেক’ কাটিয়ে আবারো মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, “যারা দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন এবং এখনও মাঠে সক্রিয়, তাদের গুরুত্ব অবশ্যই থাকবে। কে প্রার্থী হবেন তা সময়ই বলবে, তবে যেকোনো প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রিয়তা, অভিজ্ঞতা এবং সাংগঠনিক ভূমিকা বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
সব মিলিয়ে খুলনার রাজনীতিতে প্রবীণ দুই নেতার সরব উপস্থিতি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনীতির মাঠে তারা ফিরছেন কি না-এই প্রশ্ন এখন কেবল রাজনৈতিক অঙ্গনের নয়, সাধারণ জনগণ ও ভোটারদের মনেও জায়গা করে নিচ্ছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে তাদের নাম উঠে এলে হয়তো বিস্ময় থাকবে না কারও।