দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

কেশবপুর সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে মুঘল আমলের মসজিদ

19

কেশবপুর উপজেলার তিন গম্বুজ মসজিদের সংস্কার দাবি করেছেন স্থানীয়রা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন ৮০০ বছরের পুরনো যশোরের কেশবপুর উপজেলার তিন গম্বুজ মসজিদ দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় অযত্ন অবহেলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে। মসজিদটি উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের শেখপুরা গ্রামে অবস্থিত। মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত গোলাপি রঙের এ মসজিদটি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় ইতিহাসের অংশ হিসেবে সাক্ষ্য বহন করে।

মসজিদের শিলালিপি থেকে জানা যায়, কেশবপুরের মাইকেল গেট থেকে সাগরদাঁড়ি সড়কের ১৩ কিলোমিটার দূরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়ির পাশের ছোট্ট গ্রাম শেখপুরা। এ গ্রামে ওই সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে গোলাপী রঙের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শাহী মসজিদটি অবস্থিত। মুঘল শাসনামলে যশোর অঞ্চলের অনেক স্থানেই মুঘল শাসকরা বিভিন্ন স্থাপনা ও মসজিদ নির্মাণ করেন। এ সকল স্থাপনার মধ্যে শেখপুরা শাহী মসজিদটি অন্যতম। ১৯০৪ সালের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনের ৩ এর (৩) ধারা মতে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৯৭ সালে এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তিন গম্বুজ মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী নির্মিত বলে প্রত্নতত্ত্ববিদরা নিশ্চিত হয়েছেন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেবের শাসনামলে এ ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি তৈরি বলে মনে করা হয়। তবে কত সালে মসজিদটি তৈরি হয় তা জানা যায়নি।

মসজিদটির নির্মাণ শৈলী মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করে বলে ধরে নেয়া হয়েছে। মসজিদের সামনের বারান্দার ৮টি স্তম্ভযুক্ত খোলা প্রবেশ পথ আছে। এর পূর্ব পার্শ্বের চার পিলারযুক্ত বরান্দাটি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। যার পূর্ব পার্শ্বের চত্বরটি অনুচ্চ এক মিটার পুরু দেয়ালে ঘেরা। মূল স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য ২১.৫ মিটার ও প্রস্থ ১৬.৬ মিটার এবং উচ্চতা ১২ মিটার। কিন্তু দীর্ঘ ২ যুগেও এ পুরাকীর্তি পুণঃসংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

কথিত আছে, ১৮৩০ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এ মসজিদের পাঠশালাতে ইমাম মৌলভী লুৎফর হকের কাছে বাংলা, আরবি, ফারসি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছিলেন। সেসময় মক্তবভিত্তিক পাঠশালা ছিল পড়াশোনার একমাত্র মাধ্যম। তবে মসজিদের সামনের সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পীর সৈয়দ মাওলানা রিয়াজ উল্লাহর নাম লেখা রয়েছে। তিনি আরব দেশের ইসলাম ধর্মের প্রচারক হিসেবে ওই গ্রামে আস্তানা করে মসজিদটি নির্মাণ করেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মসজিদের সামনে একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। প্রতি জুম্মায় দূর-দূরাত্বের মুসল্লিরা এ পুকুরে ওজু সেরে মসজিদে প্রবেশ করেন নামাজ আদায়ের জন্যে।

সরেজমিনে দৈনিক খুলনা পত্রিকার প্রতিনিধি হারুনার রশীদ বুলবুল  গিয়ে দেখেন, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২৮ বছর আগে শেখপুরার মসজিদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। মসজিদটি গোলাপী রঙের হলেও ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে এখন ভিন্ন রঙ ধারণ করেছে। রক্ষনাবেক্ষণের জন্যে সমজিদে একজন খাদেম থাকলেও তিনি সবসময় সেখানে থাকেন না। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি পুরাকীর্তি হিসেবে পুনঃসংস্কারের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সাগরদাঁড়ির কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, মসজিদটির নির্মাণ শৈলী মুঘল স্থাপত্যের বলে ধারণা করা হয়। এনিয়ে বিতর্কও রয়েছে। মসজিদটি পুনঃসংস্কারে উর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.