কেশবপুর রাতারাতি সরকারি কালভার্ট ও খাল দখলের চেষ্টা
*কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য *চারটি বিলের পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ
কেশবপুর পৌর শহরের চারটি বিলের পানি নিষ্কাশন একমাত্র কালভার্ট ও খালটি রাতারাতি অবৈধভাবে মাটি ভরাট করে দখলে নিয়েছে ভূমিদস্যু শিমুল গংরা। এখবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খাল ও কালভার্টের মুখে মাটি ফেলতে নিষেধ করলেও তা অগ্রাহ্য করে শুক্রবার ভরাটের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
জানা গেছে, শত বছরের ওই খাল ও কালভার্ট দিয়ে পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডের মধ্যকুল ও হাবাসপোল এলাকার প্রায় চারটি বিল ও চারটি এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়। এর প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে এলাকাবাসী ও কৃষকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি ফেলা নিষেধ করলেও কর্ণপাত করেননি ভূমিদস্যুরা।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কেশবপুর পৌর শহরের মধ্যকুল আমতলা এলাকায় যশোর-সাতক্ষীরা সড়ক সংলগ্ন সরদার পাড়া রাস্তার মুখে সরকারি কালভার্ট ও খাল দিয়ে ওই ওয়ার্ডের দক্ষিণ অঞ্চলের কামারপাড়া বিল, হাবাসপোল বিল, মোড়লপাড়া ও মধ্যকুল পূর্বপাড়া বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়ে হরিগর নদীতে প্রবায়িত হয়।
এছাড়া এসব বিল সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় ৩০০টি পরিবার বসবাস করে। খাল ও একমাত্র কালভার্টের মুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধার সৃষ্টি হবে এই অঞ্চলটি। কিন্তু এরই মধ্যে সরকারি খাল ও কালভার্টসহ পাশের জনৈক ওয়াজেদ খান ডবলুর ৩০ বছর দখলে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখল করার ষড়যন্ত্র শুরু করে পার্শ্ববর্তী মণিরামপুর উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের মৃত নওশেরের ছেলে আ.লীগের দোসর শিমুল গংরা। তারা বিগত আ.লীগ সরকারের আমলে কেশবপুরের সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদার, পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল ও তাদের দোসর মধ্যকুল গ্রামের কামাল খানসহ আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ৭/৮ দফা কালভার্ট, খাল ও ওই জমি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা চালায়। এই সম্পত্তি নিয়ে যশোর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাসহ নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা জমি দখলে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে শিমুল গংরা ভোল পাল্টে স্থানীয় কতিপয় ধান্দাবাজকে ম্যানেজ করে গত মঙ্গলবার রাত থেকে ২০/২৫টি মাটি টানা অবৈধ ট্রাক দিয়ে ওই জমিসহ সরকারি খাল ও কালভার্ট দখল করে নেওয়ার চেষ্টায় গভীর রাতে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। যা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে খাল ও কালভার্টের মুখ ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।এ ব্যাপারে মহল্লাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের শরণাপন্ন হলে তিনি বিষয়টি দেখার জন্য কেশবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মনোয়ারা খাতুনকে নির্দেশ দেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ করতে বললেও তারা কথা শোনেনি। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মাটি ফেলা বন্ধ করে দেন। তিনি স্থান ত্যাগ করার পর তারা, আবারও মাটি ভরাটের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
সর্বশেষ শুক্রবার সকালে এলাকার সাধারণ জনতা, কৃষক ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান। এসময়ও মাটি ভরাটের কাজ অব্যাহত ছিল। চুক্তিতে মাটি ফেলছেন উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বড়েঙ্গা গ্রামের শিফন ও আলতাপোল গ্রামের হেলাল।উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক অবৈধভাবে ওই জমিতে মাটি ফেলতে নিষেধ করলেও তার কথা শোনেনি বলে তিনি এই প্রতিনিধিকে জানান। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে ওই সম্পত্তি জবর দখল করতে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে ‘ফাইলবাজ’দের দ্বারা সরকারি সম্পদ ও মামলা থাকা সম্পত্তি জবর দখল হওয়ায় হতবাক হয়েছেন তারা। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।হেলাল বলেন, তিনি ছয় লাখ টাকার চুক্তিতে মাটি ভরাটের কাজটি করছেন। শিমুল বলেন, বিরোধপূর্ণ ওই জমি নিয়ে ওয়ারেশদের মধ্যে আদালতে বণ্টন মামলা থাকা অবস্থায় তিনি ওই জমি খরিদ করেছেন। তার কেনার আগে একই দাগের ওই জমি একই বিক্রেতারা ১৯৯৫ সালে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি তার নামে ওই সম্পত্তি নামপত্তন না করায় তিনি ওই জমি ২০২২ সালে খরিদ করে যেভাবে হোক সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে তার নামে নাম পত্তন করে নিয়েছেন। ওই সম্পত্তি আগে কয়েক দফা দখল করতে গিয়ে দখল করতে পারেননি। বর্তমানে তার জমি দখল করতে গিয়ে সরকারি খাল ও কালভার্ট ভরাট হয়ে গেছে।মধ্যকুল গ্রামের কৃষক হযরত আলি ও শাহিনুর রহমান বলেন, কালভাট ও খাল ভরাট হওয়ার কারণে এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। ফসলের মাঠ তলিয়ে যাবে। তাতে ফসল উৎপাদন ব্যহতসহ অভাব দেখা দেবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেকসোনা খাতুন জানান, সরকারি কালভার্টের মুখ ও বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি ভরাটের জন্য মাটি ফেলছে এ খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেন।
এরপরও শুনেছি তারা ভরাটের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।