দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

কেশবপুর পৌরসভার সোয়া তিন কোটি টাকার কাজ শেষ না হতেই ধস

77

হারুনার রশীদ বুলবুল, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের কেশবপুর পৌরসভার বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের খ্রিষ্টান মিশন থেকে ১৩৩৯ মিটার (প্রায় দেড় কিলোমিটার) আরসিসি সড়কের কাজ শেষ না হতেই এক অংশ ধসে পড়েছে।

গত ২০ মে সড়কের প্লাসাইটিংয়ের কাজ শেষ করে আরসিসি ঢালাইয়ের ৮০ ভাগ কাজ শেষ করে তার ওপর কচুরিপনা দেয়া হয়। এর ১০ দিনের মাথায় গত ৩১ মে ৫০ মিটার প্লাসাইটিংসহ সড়কের একটি অংশ ধসে পড়ে।

সূত্র জানায়, নগর শাসন উন্নয়ন বিশেষ প্রকল্পের আওতায় চায়টি ব্যাকেজে কেশবপুর পৌরসভায় প্রায় ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠায় পৌর প্রশাসক মাঝে মধ্যে এ প্রকলের কাজ বন্ধ করে দিলেও ক’দিন যেতে না যেতেই আবারও একইভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অধিন, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও উন্নয়ন সংস্থা এএফডি বাংলাদেশ সরকার (গোব) এর বিশেষ বরাদ্দের আওতায় নগর শাসন ও অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় কেশবপুর পৌরসভায় চারটি প্রকল্পে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যার টেন্ডার আইডি নম্বর-৯০৫১৩২। চলতি মাসের প্রথম দিকে কাজ শুরু করে একই অর্থ বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে শেষ করার কথা। এই প্রকল্পের অধিন পৌর শহরের খ্রিষ্টান মিশন থেকে ভোগতিনরেন্দ্রপুর (ভোেগতি) গ্রামের সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলামের পুকুর পাড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণে ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ প্যাকেজের আওতায় ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণের কাজও রয়েছে। সড়কে আরসিসি ঢালাই দেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় ভোগতি গ্রামের সাহেবালী খানের পুকুর পাড় প্লাসাইটিংসহ ৫০ ফুট নিয়ে সড়কের এক অংশ ধসে পড়েছে।

পৌরবাসীর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আবু সাইদ চাটি প্যাকেজের কাজ সিডিউল অনুযায়ী না করে এ প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অতি নিম্নমানের ইটের খোয়া, ২নং ইট, সাদা ডাস্ট পাথর এবং মাটি মিশ্রিত ভিট বালু ব্যবহার করে। ফলে সড়কসহ সকল অবকাঠামো নির্মাণ কাজে ফাটলসহ ঢালাইয়ের খোয়া এবং পাথর উঠে যাচ্ছে। এছাড়া ঢালাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সিমেন্টও ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে পৌরবাসীর অভিযোগ।

এরই মেধ্যে থানার মোড় থেকে বায়সা মসজিদ পর্যন্ত এক কিলোমিটার আরসিসি সড়কে মধ্যকুলে আরসিসি সড়ক গোহাটার পাশে আরসিসি সড়কে একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। এদিকে, সমপরিমাণ কাজ না করেও ওই ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিলও দেয়া
হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, প্রত্যেকটি প্রকল্পের সামনে সাইনবোর্ড টানানোসহ কাজের তথ্য প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা গোপন রাখা হচ্ছে। প্রকল্পের তথ্য চাইলে পৌরসভার কর্মকর্তারা এবং মিউনিসিপাল ইঞ্জিনিয়ার একে অপরকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। এসব প্যাকেজের কাজ গোপন রাখা হয়েছে।

চারটি প্যাকেজের নির্মাণ কাজে একেবারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় পৌরবাসী মৌখিকভাবে পৌর প্রশাসকের কাছে একাধিক বার অভিযোগ করায় তিনি এসব কাজে তদারকি বাড়াবেন বলে জানান। ভোগতি ও মধ্যকুল গ্রামের সাহেব আলী, সাবাস সরদার ও মাসুদ সরদার বলেন, ‘ভোগতি ও মধ্যকুল তেল পাম্প পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণে ৩নং ইটের খোয়া, ২নং ইট, মাটি মিশ্রিত বালি ও ডাস্ট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ৭ ইঞ্চি পুরু করে ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি পুরু করে ঢালাই দেয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সিমেন্টও ব্যবহার করা হয়নি। ফলে কয়েক মাস যেতে না যেতেই সড়কটি ভেঙ্গে পূর্বের চেহারায় ফিরে আসবে।’ তারা এ ব্যাপারে তদন্ত দাবি করেন।

পৌরবাসী চারটি প্যাকেজে ৪৬ কোটি টাকায় বাস্তবায়িত প্রকল্পের কাজগুলি তদন্ত পূর্বক, ঠিকাদারসহ এরসাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা ঢাকার মিউনিসিপাল ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল্যা বলেন, ‘সঠিকভাবে কাজের তদারকি করা হচ্ছে। যেখানে সমস্যা, সেখানে ঠিকমত কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
ঠিকাদার আবু সাইদ বলেন, সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক রেকসোনা খাতুন বলেন, ‘বিশেষ প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় এ কাজে তদারকি বাড়ানো হবে। এছাড়া অনিয়ম হলে তার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিভাবে কার না হলে কাজের বিল দেয়া হবে না।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.