দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

কেশবপুর জাতীয় প্রাণীসম্পত সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন

কেশবপুর বর্ণাঢ্য আয়োজন : আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের ডাক

49

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের কেশবপুর প্রাণিসম্পদ খাতকে প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ ও আধুনিক করে তোলার লক্ষ্যে” আধুনিক প্রযুক্তি প্রাণীসম্পদ উন্নতি, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যশোর জেলার কেশবপুরে শুরু হয়েছে জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী–২০২৫ বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী  র‍্যালি, আলোচনা , সপ্তাহব্যাপি কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০জন  উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করা হয়।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ অলোকেশ কুমার সরকার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শরীফ নেওয়াজ , কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস সহ স্থানীয় কৃষক খামারি, সেবাগ্রহী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসানা খাতুন বলেন, দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এখন কৃষি ও প্রাণিসম্পদ। খামারিরা প্রযুক্তি ব্যবহার করলে শুধু উৎপাদন বাড়বে না, নিরাপদ মাংস ও দুধ উৎপাদনেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, সরকার পশু রোগ প্রতিরোধ, টিকাদান কর্মসূচি, প্রাণিসম্পদের উন্নত বংশবিস্তার, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি, নিরাপদ পশুখাদ্য নিশ্চিতকরণসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। খামারিদের প্রতি তিনি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অলোকেশ কুমার সরকার বলেন, খামারিরা যাতে তাদের পশুপালন উন্নত করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সরকারের সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিক প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দিতে প্রাণিসম্পদ দপ্তর সবসময় প্রস্তুত। খামারিরা চাইলে যেকোনো সময়ে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

প্রদর্শনী স্থলে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয় বিভিন্ন তথ্যসমৃদ্ধ স্টল। উন্নত জাতের গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগির পাশাপাশি প্রদর্শন করা হয় দুগ্ধজাত পণ্য, নিরাপদ পশুখাদ্য, ডেইরি ফার্ম মডেল, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি, জৈব সার উৎপাদন পদ্ধতি এবং পশুর রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সেবা।

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া খামারিরা জানান, এসব প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করলে তারা নতুন প্রযুক্তি ও আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রত্যক্ষ ধারণা পান। অনেকে নিজেদের তৈরি খাদ্য, জৈব সার ও পণ্যবৈচিত্র্য সরাসরি বিক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।

স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা ও নতুন খামারিরা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে পশুপালন বিষয়ে অভিজ্ঞ খামারিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছেন, যা তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে।
সপ্তাহব্যাপী প্রাণিসম্পদ সপ্তাহে প্রতিদিনই বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে খামার ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য পরিকল্পনা, রোগ প্রতিরোধ ও টিকাদান, আধুনিক প্রজনন প্রযুক্তি, নিরাপদ মাংস ও দুধ উৎপাদন, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, পশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এছাড়া পশু চিকিৎসকদের মাধ্যমে পশু চিকিৎসা, পরামর্শ, নমুনা পরীক্ষা ও রোগ শনাক্তকরণ সেবা দেওয়া হচ্ছে, যা দর্শনার্থীদের নিকট বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে  বক্তারা বলেন, দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান উপাদান প্রাণিসম্পদ খাত। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, মাছ থেকে শুরু করে দুধ, ডিম, মাংস সবকিছুই গ্রামীণ মানুষের জীবন-জীবিকায় বড় অবদান রাখছে। সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা, ঋণ সুবিধা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি খামারিদের আরও উৎসাহিত করছে।

তারা আরও বলেন, বেকার যুবকদের জন্য খামার গড়ে তোলা এখন লাভজনক এবং নিরাপদ বিনিয়োগ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে খামার স্থাপনের ফলে কর্মসংস্থান বাড়ছে, নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এবং গ্রামের পরিবারগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.