কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি :যশোরের কেশবপুর উপজেলার ইমাননগর গ্রামের আজগার মোড় চত্বরটি সোমবার সকাল থেকেই যেন এক উৎসবের আমেজে ভরে ওঠে। ছোট্ট বাজার চত্বরটিতে জড়ো হতে শুরু করেন গ্রামের নারী-পুরুষ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং সমাজসেবী ব্যক্তিরা। সবার চোখে মুখে প্রত্যাশার আলো, কারণ আজকের দিনটি ছিল এলাকার ৮টি হতদরিদ্র পরিবারের জীবনে এক নতুন শুরু।
বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং উন্নয়ন সংস্থা সমাধানের বাস্তবায়নে ১৪তম পর্যায়ের অনুদানের আওতায় গাভি পালন কর্মসূচির অধীনে এসব পরিবারের হাতে বিনামূল্যে গাভী তুলে দেওয়া হয়। আর এ উপলক্ষে আয়োজিত হয় প্রাণবন্ত এক অনুষ্ঠান।
উৎসবের আমেজে মানবিক আয়োজনে সমাধান সংস্থার পরিচালক (কর্মসূচি) আবু জাফর মাতুব্বর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তার কথায় উঠে আসে গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের গল্প একটি গাভী শুধু দুধ দেয় না, দেয় একটি পরিবারের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি, আত্মবিশ্বাস ও আর্থিক নিরাপত্তা।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেশবপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ রকোনুজ্জামান । তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রামীণ দারিদ্র্যতা মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। আজ যেসব পরিবার গাভী পাচ্ছেন, তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎও আজ থেকে বদলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো বলেন তিনি।
বিশেষ অতিথি উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল ইসলাম গাভী পালনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপকারভোগীদের পক্ষ থেকে কথা বলেন ইমাননগরের রশিদা বেগম । তার কণ্ঠের আবেগ পুরো চত্বরকে মুহূর্তে নীরব করে দেয়। স্বামী অসুস্থ, সংসারে কোনো রোজগার নেই। অনেক সময় ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো খাবার জোটে না। আজকের এই গাভীটা আমাদের বাঁচার পথ খুলে দিল। দুধ বিক্রি করে হয়তো ছোট একটা আশার আলো জ্বলবে,বলতে বলতে তিনি চোখের পানি সামলাতে পারেননি।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমাধানের প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী মোঃ মুনছুর আলী , যিনি গাভী পালনের নিয়ম-কানুন ও প্রকল্পের উদ্দেশ্য উপস্থিতদের সামনে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে যখন একে একে ৮ জনের হাতে ৮টি গাভী তুলে দেওয়া হলো পুরো পরিবেশ যেন আনন্দে ভরে ওঠে। কেউ কেউ গাভীর মুখে পানি ধরছেন, কেউবা গলায় ফুলের মালা পরাচ্ছেন। উপস্থিত গ্রামবাসীরাও এই মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তালি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
উপকারভোগীরা বলছেন,একটি গাভী তাদের কাছে শুধু প্রাণিসম্পদ নয়, বরং দারিদ্র্য থেকে মুক্তির সোপান। তাদের প্রত্যাশা, নিয়মিত দুধ বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসবে এবং সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাদ্য নিশ্চিত হবে।
এ ধরনের উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিকে যেমন শক্তিশালী করে, তেমনি দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চর্চাও বাড়ায়। সমাধান সংস্থা ও বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতে আরও বেশি পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
দিনশেষে ৮ পরিবারের মুখে হাসি আর চোখে নতুন স্বপ্নের আলোই বলে দেয় মানবিক সহায়তা প্রকৃত অর্থেই জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে।