হারুনার রশীদ বুলবুল, কেশবপুর (যশোর): যশোরের কেশবপুরে শিক্ষার্থীদের দেয়া সরকারি সহায়তার বই (বিনামূল্যে) নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরে, উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর চাহিদা পত্র প্রেরন করে। ওই পত্রে গত ৪/৫ বছর তিনি চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ২/৩ গুন বেশী চাহিদা দেখিয়ে, অতিরিক্ত বই গুদামজাত করে আসছিলেন। এরমধ্যে ২০২০ কেজি বই ৪৬ হাজার টাকায় নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় দেখিয়ে, প্রায় ১০ হাজার কেজি (৩ ট্রাক) নতুন ও পুরাতন বই বিক্রি করে দিয়েছেন। যা খরিদ করতে সরকারের খরচ হয় প্রায় কোটি টাকা। চক্রটি তাদের সাজানো নিলাম ডাকেও সরকারকে ঠকিয়েছে বলে সূত্র জানায়। এদিকে নিলাম চিঠিতে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ে বিক্রিত বই ক্রেতাকে বুঝে নেয়ার কথা বলা হলেও ৬ মার্চ গভীর রাতে গোডাউন থেকে তিন ট্রাক বই যশোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যা সোসাল দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কেশবপুরে মাদরাসাসহ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ব্যাপক তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, কেশবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশিদ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে কেশবপুর উপজেলা ব্যাপী সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ২/৩ গুন (বিনামুল্যের) বই গ্রহন করো তা কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গুদাম ঘরে গুদামজাত করে রাখেন। বিগত তিন বছরের গুদাম জাত বইনজ ২০২৪ শিক্ষা বর্ষের মাধ্যমিক, দাখিল ও ইবতেদায়ী জ্বরের এসব বই প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রয় করার জন্য উপজেলা বিক্রয় কমিটির ১১/১১/২০২৪ তারিখের সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৪ মার্চ সকাল ১০টায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয়ের ঘোষনা দেয়া হয়। যার স্মারক নং-৩৭.০২.০০০০.০৭১.০৪.০০১.১৭.৩০৭। চিঠিতে ২০০০ হাজার কেজি বই ২০ টাকা দরে ৪০ হাজার টাকা বিক্রয় মূল্য নিদ্ধারন করা হয়। নিলাম ডাকে ৩ জন ক্রেতা অংশ নেয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নিলামে ২০২০ কেজি বই ২০.৬০ টাকা দরে ভ্যাট ও আয়করসহ সর্বমোট ৪৬ হাজার ৮১৪ টাকায় কেশবপুরের নাহিদ এন্টার প্রাইজের মালিক নাহিদুজ্জামান নিলাম ক্রয় করেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সে মোতাবেক বিক্রয় কমিটির সদস্য সচীব উপজেলা শিক্ষা অফিসার ৬ মার্চ ওজনের মাধ্যমে ২০২০ কেজি বর্ষী অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে ক্রেতাকে নিজ খরচে বুঝে নেয়ার জন্য চিঠি দেন। বই বিক্রয়ের সমস্ত কার্যক্রম ঠিক রেখে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশিদ এবং কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান যোগসাজসে দিনের বেলায় ক্রেতাকে বই বুঝে না দিয়ে তাদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে ৬ মার্চ দিনগত রাত ২টার দিকে ১০ হাজার কেজি (৩ ট্রাক) বই গোডাউন থেকে ট্রাকে লোর্ড করে রাতারাতি যশোরে পাঠিয়ে দেন। যার মধ্যে একটি গাড়ির নম্বর- ঢাকা-মেট্রো-১৭-০৩৬০ অবশ্য যশোরে যার কাছে ওই বই বিক্রয় করা হয়েছে তিনি সাংবাদিকদের জানান ৮ হাজার ৭০০ কেজি বই ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় তিনি, খরিদ করেছেন। তার বক্তব্য সংরক্ষিত আছে। সূত্র জানায়, এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে মাদরাসা পর্যায়ে দাখিল, ইবতেদায়ী এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ট শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনীর বই। এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কমিটির প্রধান করে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সদস্য সচীব এবং কমিটির সদস্য করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতাবিজ ৫জনকে। কিন্তু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশিদ অন্য সদস্যদের অগচরে, সরকারি বই গুদামজাত করাসহ সাজানো নিলাম বিক্রয়ের মাধ্যমে দুর্নীতির জড়িত বলে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে। এই বই কান্ডে এলাকার একটি রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতারাও জড়িয়ে পড়ে। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। এলাকার সচেতন মহল সরকারি বই দুর্নীতির তদন্ত পূর্বক এর সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট উধর্তন কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
যশোরের খালদা রোর্ডের অন্তর এন্টার প্রাইজের মালিক রনজিৎ কুমার বলেন, তিনি ৮ হাজার ৭০০ কেজি বই ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় খরিদ করেন। এরপর ৬ মার্চ রাত ২টার দিকে ৩টি পিকাপ ট্রাকে করে যশোরের নিয়ে যান। গোডাউন থেকে বই গুলি
বের করে দেন শিক্ষা অফিসারের লোকজন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রব বলেন, বই বিক্রয়ের নিলাম দেয়াটা সঠিক ভাবে করা হয়েছে। তবে গভীর রাতে ক্রেতাকে বই দেয়া হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও নিলাম কমিটির সদস্য সচীব এএসএম জিল্লুর রশিদ বলেন, গোডাউনের চারি আমার কাছে থাকে। ওই দিন রাতে আমাদের অফিসের হিসাব রক্ষক মিজানুর রহমান উপস্থিত থেকে গোডাউন থেকে বই বের করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ছিলো কি-না তা আমি জানিনা। তবে গোডাউনের চাবি রাত দুইটার সময় অন্যদের হাতে কি ভাবে গেল তার কোন উত্তর তিনি দিতে পারেন নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঢাকায় অবস্থান করছেন তিনি ফিরলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
হিসাব রক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, গোডাউনের চাবি নিয়ে সেখানে থাকার কথা শিক্ষা অফিসার তাকে বলেন নি। সে এব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
এব্যাপারে জানতে বুধবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেনের কার্যালয়ে যেয়ে তাকে না পেয়ে তার মোবাইল নম্বরে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।