দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

কুয়েট ক্যাম্পাস যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজ্য

24

খুলনা: ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারে পা রাখতেই সবার নজর কাড়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য—যেন প্রকৃতির এক অপরূপ রাজ্যে প্রবেশ করেছেন। খুলনার কুয়েট ক্যাম্পাস, যা সাধারণত শিক্ষার্থীদের জন্য এক শিক্ষা পরিবেশ, আজকাল ফুলের সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে উঠেছে। একে দেখে মনে হয় যেন এটি একটি ফুলের রাজ্য, যেখানে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ঢুকে পড়েছে প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি পথের পাশেই।

প্রথমেই চোখে পড়ে ক্যাম্পাসের চারপাশে গড়া কনক্রিটের বেড়াজাল। তবে এই নির্মাণ সত্ত্বেও, সবকিছু যেন প্রকৃতির মায়ায় ভরা। রাস্তার দু’ধারে ফুটে থাকা রং বেরঙের ফুলগুলোর মধ্যে ঘুরে বেড়ায় নানা রকমের মৌমাছি। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণে প্রতিদিনই যেন নতুন ফুলের আগমন ঘটে, আর এর মধ্যে আবার বাদামি, সাদা, হলুদ, লাল, গোলাপী, সবুজ—সব রঙের ফুলের প্রাধান্য দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরেও এক ধরনের ভিন্ন সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে—পদ্ম ফুলের কোমল ও সাদৃশ্য রূপ। পুকুরের জল যেন তার রূপকে আরও বেশি উজ্জ্বল করে তোলে। পুকুরে পদ্মফুলের নরম পাপড়ি দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে এই ক্যাম্পাস। ফুলগুলো ভেসে আছে পানির উপর, আর সেই দৃশ্য কুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীদের মনকে প্রশান্তি দেয়।

এ ক্যাম্পাসের পরিবেশ শুধু যে শিক্ষার্থীদের জন্যই উপকারী, তা নয়, বরং অভিভাবকদের জন্যও এটি একটি বিশেষ জায়গা হয়ে উঠেছে। যখন তারা তাদের সন্তানদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন, তখন ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায় তারা। এই ফুলের রাজ্যে পদচারণা করতে করতে তারা যেন ভুলে যান শহরের কংক্রিটের দুঃসহ পরিবেশকে এবং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে নিজেদের মধ্যে স্নিগ্ধতা অনুভব করেন।

এ ধরনের এক চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পেতে কুয়েট প্রশাসনের বিশেষ অবদান রয়েছে। তাদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে এই ফুলের সৌন্দর্য পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে। কুয়েট কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা এবং ফুলের পরিচর্যা করে। ফুলের এই সুবাসে শিক্ষার্থীরা নিজের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হয় এবং ক্যাম্পাসে আসা অভিভাবকরা সন্তুষ্ট হন তাঁদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন দেখে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধরনের পরিবেশের প্রভাব শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষকে শান্তিপূর্ণ এবং সৃজনশীল হতে সাহায্য করে, যা ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখে। প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ তাদের মাঝে নতুন ধারণা এবং অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।

এটি শুধু ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোযোগের উন্নতি সাধন করছে না, বরং ক্যাম্পাসের পরিবেশে একটি বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও স্থাপন করছে। একদিকে যেমন ফুলের সৌন্দর্য ক্যাম্পাসের পরিবেশকে পরিপূর্ণ করেছে, তেমনি অন্যদিকে এটি একটি সামাজিক বার্তাও বহন করে—প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং তার সুরক্ষা।

এই ফুলে ভরা ক্যাম্পাসটি শুধু কুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং সমাজের সকলের জন্য একটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে যে, প্রকৃতির সৌন্দর্য মানুষের মনের প্রশান্তি ও তৃপ্তির জন্য অপরিহার্য। ফুলের এই রাজ্যে যে শান্তি এবং আনন্দ, তা মানবমনের একটি গহীন স্থান থেকে উদ্ভূত। কুয়েট ক্যাম্পাসের এই ফুলের রাজ্য যেন একটি জীবন্ত প্রমাণ যে, প্রকৃতির স্নিগ্ধতা মানুষের জীবনে অমৃত সঞ্চারিত করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.