কয়রায় সিপিপি পুনর্গঠন না করেই চলছে বিতর্কিত কার্যক্রম, প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ এলাকা কয়রায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির (সিপিপি’র) কার্যক্রম না থাকা ও স্থানীয় ইউনিট পুনর্গঠন না করায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পলাতক বিগত কমিটির সদস্যদের নামে প্রয়োজনীয় সেফটি সামগ্রী বিতরণ করায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপির) কমিটি পূনর্গঠন না করে দীর্ঘ দিন একই নিয়মে চলে আসছে। কিন্ত গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গন অভ্যুত্থান পর সেই সব সিপিপির টিম লিডারদের অনেকই এলাকা ছাড়া হয়ে আছে, কিন্তু এখনো দূর থেকে তাদের ইশারায় এসব সেফটি সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। তবে স্থানীয় বিভিন্ন সেচ্ছাসেবকদের অভিযোগ বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে গঠন করা এক তরফা কমিটি বহাল থাকায় সিপিপির কমিটি পূনর্গঠনের কোন উদ্যোগ নেয়নি কতৃপক্ষ। কন্তু বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে একপর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন সেটা পূনর্গঠনের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না করে পুরনোদের মাঝে গোপনে বিতরন করা হয়েছে সেসব সামগ্রী ।
স্থানীয়রা বলছেন, সিপিপির কয়রা উপজেলা টিম লিডার থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড টিম লিডাররা অনেকেই গত বছরের ৫ই আগষ্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এলাকা ছাড়া।তাদের আর কখনো কযরায় দেখা যায়নি, এমনকি সিপিপির কয়রা উপজেলার কার্য্যলয়টিও দীর্ঘদিন বন্ধ। অভিযোগ উঠেছে নামমাত্র সিপিপির কিছু কার্যক্রম থাকলেও সেটা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। উপকূলে এখন দূর্যোগ মৌসুম শুরু হয়েছে, বর্তমান সিপিপির কোন কার্যক্রম উপজেলাতে নাই। সে কারণে এবার কোন প্রস্তুুতিও দেখা যাচ্ছেনা তাই নতুন করে কমিটি পূনর্গঠন করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
সিপিপি’র স্থানীয় ইউনিট গঠনের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি এলাকায় সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত ও নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন করে ইউনিট গঠনের কথা থাকলেও, গত কয়েক বছর ধরে অনেক এলাকাতেই সেই প্রক্রিয়া করা হয়নি। পুনর্গঠন ছাড়াই প্রয়োজনীয় সেফটি সামগ্রী বিতরণে, বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত স্বেচ্ছাসেবকরা।
তবে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বরাদ্দকৃত হুইসেল, টর্চ লাইট, লাইফ জ্যাকেট,বাই সাইকেল, রেইনকোর্ট,সহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ চলছে পুরনো তালিকা ধরে সেটা নির্বাচিত কিছু লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটা নিয়ে নানা মন্তব্য ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
সিপিপির একজন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক আশিকুজ্জামান বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ ঝড় -জলচ্ছ্বাস উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে আসছি। কিন্তু তেমন কোন সুযোগ সুবিধা না পেলেও কাজ করে যাচ্ছি। তবে জানতে পারি কয়েকদিন আগে সেচ্ছাসবকদের মাঝে গোপনে বাই সাইকেল থেকে শুরু করে অনন্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে অথচ আমরা কিছুই জানিনা।
কয়রার স্থানীয় সেচ্ছাসেবী কাজের নেতৃত্বে থাকা রাসেল আহাম্মেদ নামের এক যুবপ্রতিনিধি জানান, আমাদের প্রাণপ্রিয় উপকূল যে ঝুঁকির মুখে, তার জন্য শুধু কেবল আবওহাওয়া ও জলবায়ু দায়ী নয়, দায়ী আমাদের দুর্বল পূর্ব প্রস্তুতিও। সিপিপি যে উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে উঠেছিল কয়রাতে তা আজ সম্পুর্ণরুপে নিষ্ক্রিয় ও সর্বমহলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কেননা তালিকা অনেক পুরোনো, অধিকাংশ সদস্যদের বয়স ৫০ উর্ধ্বে এমত অবস্থায় এখনও প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে ও ঐসব বৃদ্ধ ও নিষ্ক্রিয়দের মাঝে। এসব কার্যক্রমে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়বদ্ধতার অভাব রয়েছে। এমনকি এর কুফল পরিণতি উপকূলবাসীর জন্য ভয়াবহ হতে পারে। আমরা যারা মাঠপর্যায়ে দুর্গম ও কঠিন সময়ে কাজ করি, তাদের সকলের সময়ের দাবি হলো কয়রা উপজেলা সিপিপিকে যুগোপযোগী, যুব, দক্ষ ও স্বচ্ছ সংগঠন হিসেবে পুনর্গঠন করা। এটি উপকূলবাসীর প্রাণরক্ষার জন্য প্রয়োজন।
কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের অবসারপ্রাপ্ত অধ্যাপক, আ,ব,ম আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিবছর কোন না কোন ভাবেই প্রকৃতিক দূর্যোগের স্বীকার হচ্ছে কয়রার মানুষ। বেঁড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে ফসলের মাঠ থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি । কিন্তু এই দূর্যোগের সময় আমরা যখন ঘরে বসে থাকি, তখন সিপিপি সেচ্ছাসেবকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড়-জলচ্ছ্বাসে মানুষের যান-মাল রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে। সামনে দূর্যোগ মৌসুম তাই পুরনো সদস্য যারা এলাকায় নাই এবং অনেকে সক্রিয় নাই তাদের বাদ দিয়ে তরুনদের নিয়ে সিপিপি পূনর্গঠন করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার।
খুলনা জেলা বিএনপিন সদস্য এম এ হাসান বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী সৈরাচারদের দিয়ে সিপিপির এই কমিটি গঠন করা ছিল। তারা সবাই এলাকায় ছাড়া, আমরা চাই পুরনো কমিটি বাদ দিয়ে নতুন করে যারা সেচ্ছাসেবী কাজ করতে আগ্রহী তাদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করা হলে দূর্যোগের সময় মানুষকে আরো সচেতনতায় কার্যকারী ভূমিকা পালন করবে।
নিষ্ক্রিয় সিপিপি কমিটির মাঝে সেফটি সমাগ্রী বিতারণের বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, সিপিপি পুনর্গঠনের জন্য আমরা স্থানীয় সেচ্ছাসেবীদের সাথে সমন্বয় করে কয়েকবার নতুন তালিকা হালনাগাদের জন্য প্রস্তুত করেছি। তবে এই অবস্থার মধ্যে সিপিপি পুনর্গঠন না করে সেফটি সামগ্রী বিতরণে আমি নিষেধ করলেও সংশ্লিষ্ট সিপিপির উপপরিচালক সেটা অমান্য করে তিনি সেগুলো বিতরণ করে গেছেন। যা বিভিন্ন মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তবে সিপিপি পুনর্গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সিপিপি খুলনার উপ পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, কমিটি পূনর্গঠন করার কাজ আমাদের হাতে নাই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনলায়ের অনুমতি না পেলে আমরা পুনর্গঠনের কাজ করতে পারছিনা। তবে টিম লিডার ও অনেক সদস্য এলাকায় না থাকায় কার্যক্রম সঠিক ভাবে পরিচালনা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন টিম লিডার এলাকায় না থাকলে তার স্থলাভিষিক্ত অন্য সদস্যা দায়িত্ব পালন করবেন। এবং ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন -উপজেলা পর্যন্ত মিটিং করে কোন কোন সদস্য এলাকায় নাই এবং নিস্কৃয় হয়েছে, তাদের নাম বাছাই করে রেজুলেশনের মাধ্যমে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন সদস্য যুক্ত করার জন্য জানালে পরবর্তী বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।