তিনি এখন আর অভিনয়ে নেই। লাইট-ক্যামেরাকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক আগে। দেশেও থাকেন না। তবুও প্রতিদিন বাংলার ঘরে ঘরে উচ্চারণ হয় তার নাম। তিনি শাবানা। বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি, এক সময়ের সুপারস্টার অভিনেত্রী । আজ তিনি পদার্পণ করলেন জীবনের ৭৪ বছরে। ১৯৫২ সালের ১৫ জুন জন্ম নেওয়া এই শিল্পী গত ২৪ বছর ধরে রূপালি পর্দা থেকে দূরে থাকলেও বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের হৃদয়ে তার নাম আজও সমান উজ্জ্বল।
তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে আছে, ‘চকোরী’, ‘ভাত দে’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ইত্যাদি।
মাত্র আট বছর বয়সে সিনেমায় যাত্রা শুরু করেন শাবানা। এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় তার। তখনও তার নাম শাবানা হয়ে উঠেনি। তিনি রত্না নামেই অভিনয় শুরু করেছিলেন। ‘চকোরী’ ছবি দিয়ে নায়িকা হিসেবে যাত্রা করেন।
এরপর একে একে চার দশক ধরে উপহার দিয়েছেন প্রায় ৩ শতাধিক সিনেমা। ক্যারিয়ারে নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন শাবানা। তবে আলমগীরের সঙ্গেই তার সাফল্য সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়।
অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শাবানা দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে আছে- প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্য নিকেতন পুরস্কার ও কথক একাডেমি পুরস্কার। এ ছাড়াও শাবানা মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, রুমানিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরও বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন শাবানা। দু‘জনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা সংস্থা এস এস প্রোডাকশন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।
১৯৯৭ সালে শাবানা অজানা কারণে হঠাৎই বিদায় নেন চলচ্চিত্র থেকে। শাবানার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে সুমী ইকবাল, ছোট মেয়ে ঊর্মি সাদিক ও একমাত্র ছেলে নাহিন সাদিক। বর্তমানে নিউ জার্সিতে স্বামী প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন শাবানা। পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে আসা হয়নি। যদিও মাঝে মাঝে পারিবারিক কাজে দেশে এলেও তিনি থাকেন আড়ালেই।
এই বয়সে নিজের জন্মদিন তেমন মনে থাকে না শাবানার। নাতি-নাতনিদের জন্মদিন নিয়েই এখন আনন্দ বেশি হয় তার। তারাই মনে করিয়ে দেয় শাবানার জন্মদিনটা। থাকে পারিবারিক নানা আয়োজন। আর দূর প্রবাসে থেকেও তিনি অনুভব করেন কোটি মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া। এই প্রাপ্তিকে জীবনের সেরা অর্জন বলেই মনে করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুপস্থিত থাকলেও ফেসবুকে নিজের ছবি, ভিডিও আর শ্রদ্ধাঞ্জলির খবর তার কাছে পৌঁছে দেয় সন্তানরা। সেসব দেখে আপ্লুত হন শাবানা।