দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

১২০ দিনে গুমের বিচার বাধ্যতামূলক

57

বাংলাদেশে বহু বছর ধরে আলোচিত ও বিতর্কিত ‘গুম’ ইস্যুতে প্রথমবারের মতো কঠোর আইনগত কাঠামো আসছে। গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘বিশেষ ট্রাইবুনাল’ গঠন এবং অভিযোগ গঠনের পর ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা রেখে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) এবং গঠিত বিশেষ ট্রাইবুনাল। এতে বলা হয়েছে—গুম একটি চলমান অপরাধ (Continuing Offence), যার দায় আজীবন বহন করবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা।

গোপন আটক কেন্দ্র বা ‘গুমঘর’ স্থাপন ও ব্যবহারের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া, ভুক্তভোগী, সাক্ষী, ও তথ্য প্রদানকারীর সুরক্ষার জন্য বিশেষ আইনি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রেস সচিব জানান,“এই অধ্যাদেশের ফলে দেশে আর কোনো ‘আয়নাঘর’ থাকবে না। গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন বা ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।”

‘আয়নাঘর’ ও গুম রাজনীতির কালো অধ্যায়

বাংলাদেশে ‘আয়নাঘর’ শব্দটি এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কথিত গোপন আটক কেন্দ্রগুলোর নাম থেকে। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মীসহ বহু মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।

প্রেস সচিব বলেন,“শেখ হাসিনার সময় হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে গুম হয়েছিল। গঠিত কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা চার হাজার ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

এই কমিশন, যা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গত বছর গঠিত হয়, তার প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করে-‘গুমের নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে’।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশে গুমের বিচারের দাবিতে চাপ বাড়ায়। সেই প্রেক্ষাপটে নতুন এই অধ্যাদেশকে অনেকেই ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন।

বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। অনেক মামলার রায় দিতে বছর, এমনকি দশকও লেগে যায়। কিন্তু এই অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে- অভিযোগ গঠনের ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক।

অধ্যাদেশে শুধু অপরাধীদের শাস্তি নয়, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য আইনগত সহায়তা, ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিধানও রাখা হয়েছে।

‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা তহবিল’ গঠন করা হবে, যা থেকে ভুক্তভোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি, গুম সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার (Database) তৈরি করা হবে। এতে প্রতিটি অভিযোগ, তদন্ত অগ্রগতি ও রায়ের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখন থেকে গুমের অভিযোগ সরাসরি গ্রহণ ও তদন্ত করতে পারবে। আগে এ ধরনের অভিযোগ পুলিশ বা তদন্ত সংস্থাগুলোর মাধ্যমে যাচাই করতে হতো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.