এম সাইফুল ইসলাম: গণঅভ্যুত্থানে মিছিলে সামনের সারিতে ছিলেন খুলনার বিএল কলেজের শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান রকি।
আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য করে প্রশাসন। খুলনার পাইকগাছায় নিজ গ্রামে ফিরে যায় রকিবুল। সেখানে ছাত্র-জনতাকে একত্রিত করে আবার আন্দোলনে পথে নামে।
অবশেষে আসে বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ। ৫ আগষ্ট মুক্তির স্বাদ নিতে লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করতে গিয়েছিলেন রকিবুল। দুর্ঘটনাবশত: বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনি মারা যান। মুহূর্তে আনন্দ পরিনত হয় শোক মিছিলে।
জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থানে প্রাণ হারিয়েছে খুলনার পাঁচ জন। এরই মধ্যে পাঁচ আগষ্ট ঘটেছে সরকার পতন। নানা পট-পরিবর্তনে কেমন আছে তাদের পরিবার। এ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ ৪র্থ পর্ব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় উৎসব উদযাপনে মিছিল নিয়ে পাইকগাছায় চাঁদখালি বাজারে যান রকিবুল। সেখানে বিদ্যুতের খুটির সাথে লাল-সবুজের পতাকা টানাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
সরেজমিনে রকিবুলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার বাবা রফিকুল ইসলাম গাজীর একটি চোখ নষ্ট। বাড়ির সামনে ছোট্ট দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালান। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রকিকুল ছিলেন বড়। তিনি খুলনার বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। খুলনায় থাকতেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরে কলেজ বন্ধ এবং কারফিউ জারি হলে গ্রামে ফিরে ছাত্র-জনতাকে একত্রিত করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
বাবা রফিকুল গাজী জানান, আমার ছেলে আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিলো খুলনায়। ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ায় বাড়ি চলে আসে। যেদিন শেখ হাসিনা পালায়, সেদিন বিজয়ের পতাকা তুলতে গিয়ে আমার ছেলে শহীদ হয়।
তিনি আরও বলেন, ছেলের মৃত্যুর পর চায়ের দোকানের অল্প আয় দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলছিল। আমি একজন চা বিক্রেতা। আমার একটা চোখ নষ্ট। এখন পর্যন্ত আর্থিক কোন সহযোগিতা পাইনি আমরা। খুলনা বিএল কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, রকিবুল ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিলো। আমাদের সহপাঠী ও সহযোদ্ধা। রকিবুলের মতো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আজকের স্বাধীনতা অর্জন।
খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আহত ও শহীদ পরিবারের তালিকা প্রণয়ন কমিটির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সাইফ নেওয়াজ জানান, তথ্যগত কারণে রকিবুল হাসান রকির জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের বরাদ্ধকৃত অর্থ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই তাদের বরাদ্দকৃত টাকা দেওয়া হবে।