দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

রাশিয়ায় ইউক্রেনের নজিরবিহীন ড্রোন হামলা, ধ্বংস ৪০টির বেশি যুদ্ধবিমান

133

ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতরে একযোগে চালিয়েছে বৃহত্তম ড্রোন হামলা, যার টার্গেট ছিল চারটি প্রধান বিমানঘাঁটি। এই ‘স্পাইডারওয়েব’ নামের অভিযানে ধ্বংস হয়েছে রাশিয়ার কমপক্ষে ৪০টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে রয়েছে কৌশলগত বোমারু এবং নজরদারি বিমান। ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ এ দাবি করেছে।

অভিযানটি শুরু হয় এক বছরের বেশি সময়ের পরিকল্পনার পর। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার রাতে ভাষণে বলেন, “এটি একেবারেই অনন্য এক অভিযান। প্রতিটি ধাপে নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল।”

চারটি দূরবর্তী বিমানঘাঁটি—ইর্কুৎস্কের বেলায়া, রিয়াজানের ডিয়াগিলেভো, মুরমানস্কের ওলেনিয়া এবং ইভানোভোতে আঘাত হানে ১১৭টি ড্রোন। এসবিইউ জানায়, এসব ড্রোন রাশিয়ার ভেতরে থাকা ট্রাক থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। মোবাইল হাউজিংয়ের ভেতরে লুকানো ড্রোনগুলো সুনির্দিষ্ট সময়ের সিগনালে ছুটে যায় লক্ষ্যবস্তুতে।

এসব বিমানঘাঁটি রাশিয়ার কৌশলগত যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। হামলায় ধ্বংস হয়েছে টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২এম৩ বোমারু, সঙ্গে রাশিয়ার হাতে থাকা অল্প কয়েকটি এ-৫০ নজরদারি বিমানের একটি। এসবিইউর হিসাবে, হামলার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৭০০ কোটি ডলার, আর ধ্বংস হয়েছে রাশিয়ার কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বাহকের ৩৪ শতাংশ।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হামলার কথা স্বীকার করে একে ‘সন্ত্রাসী তৎপরতা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা জানায়, ইভানোভো, রিয়াজান ও আমুর অঞ্চলে হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। তবে ইর্কুৎস্ক ও মুরমানস্কে কিছু বিমান আগুনে পুড়েছে। আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে এবং কিছু হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে মন্ত্রণালয়।

ইর্কুৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর কোবজিয়েভ জানান, বেলায়া ঘাঁটির কাছে একটি ট্রাক থেকে ড্রোন উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কত সংখ্যক ড্রোন ব্যবহৃত হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়।

এসব হামলা চালানো হয় এমন সময়ে, যখন রাশিয়া ও ইউক্রেন শান্তি আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে তুরস্কের ইস্তানবুলে। এর আগেই শনিবার রাতে রাশিয়া চালিয়েছিল সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা—৪৭২টি ড্রোন ব্যবহার করে। একই দিনে রাশিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৬০ জনের বেশি আহত হয়।

এসব পাল্টা হামলার মধ্যেই সোমবার শুরু হওয়ার কথা রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা। যদিও আলোচনার ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনায় সহযোগিতা করছেন না।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে পুতিন তুরস্কে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিলেও শেষ মুহূর্তে নিজে উপস্থিত হননি। ফলে উভয় পক্ষের নিম্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরাই আলোচনায় অংশ নেন। ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, তারা আলোচনায় তিনটি মূল দাবির ওপর জোর দেবে: পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, এবং অপহৃত শিশু ও জিম্মিদের মুক্তি।

এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক নতুন ও জটিল ধাপে প্রবেশ করেছে। একদিকে বড় পরিসরে পাল্টা হামলা, অন্যদিকে টালমাটাল শান্তি প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে ইউক্রেনের এসবিইউ জানিয়েছে, “আমরা শত্রুকে আমাদের ভূমি থেকে তাড়িয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রয়োজনে মাটির নিচ থেকেও আঘাত হানব।”

এই অভিযানের ভিডিও ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একটি ভিডিওতে বেলায়া ঘাঁটিতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়, সঙ্গে এসবিইউ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভাসিল মালিউকের কণ্ঠ, “দেখুন, শত্রুর বিমানঘাঁটি কেমন দগ্ধ হচ্ছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেনের এই হামলা শুধু সামরিক কৌশল নয়, বরং একটি শক্তিশালী বার্তা। রাশিয়ার অভ্যন্তরে এভাবে ঘাঁটি লক্ষ্য করে একযোগে হামলা চালানো এক নজিরবিহীন ঘটনা। আর এর মাধ্যমে ইউক্রেন দেখিয়ে দিল—তারা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণেও এখন সক্ষম।

এই সংঘর্ষ থামাতে হলে এখন সময় শান্তি আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার। তবে বাস্তবতা বলছে, যুদ্ধ থামতে এখনো দীর্ঘ পথ বাকি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.