ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় কালমেগি আঘাত হেনেছে। শক্তিশালী বাতাস ও ভারী বৃষ্টিপাতে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৫৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কালমেগির প্রভাবে সেবু দ্বীপের শহরগুলো তলিয়ে গেছে। গাড়ি, ট্রাক ও কনটেইনার পানিতে ভেসে যাচ্ছে। সেবুর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের উপ-প্রশাসক জানিয়েছেন, এই শহরে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেছে। কালমেগির আঘাতের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেবু শহরে ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা মাসিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি।
সেবুর প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বলেছেন, প্রকৃত ঝুঁকি ছিল পানি। বন্যার কারণে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় দুর্যোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধারকারীরা এখনো পানিবন্দি মানুষদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
লেইতে প্রদেশে এক বৃদ্ধ এবং বোহলে এলাকার এক ব্যক্তি ঝড়ের তাণ্ডবে নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ঝড়ের সময় পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করে এবং মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড় ও টাইফুন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। উষ্ণ মহাসাগর ও আর্দ্র বায়ুমণ্ডল এই প্রক্রিয়াকে তীব্র করছে। সেবুর তথ্য কর্মকর্তা জানান, গত সেপ্টেম্বরে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিরাপত্তার জন্য তাঁবু থেকে সরানো হয়েছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রায় ৪ লাখ মানুষকে ঝড়ের পথে আগাম সরিয়ে এনেছে। ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়ে ফিলিপাইনের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। সিআরইউপি সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে এবং এখনও কোনও জীবিত ব্যক্তির তথ্য পাওয়া যায়নি।
টাইফুন কালমেগি বর্তমানে ভিসায়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করছে। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার এবং দমকা হাওয়ার গতি ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে। এতে অনেক স্থানে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে।
ফিলিপাইনে প্রতি বছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে আরও কয়েকটি ঝড় আঘাত হানতে পারে। গত সেপ্টেম্বরেও সুপার টাইফুন রাগাসা ফিলিপাইন ও প্রতিবেশী তাইওয়ান ধ্বংসপ্রাপ্ত করেছিল, এতে তাইওয়ানে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।