দৈনিক খুলনা
The news is by your side.

ঘুষ-দুর্নীতির সাম্রাজ্য খুলনার আরসি ফুড ইকবালের: সাম্রাজ্য ভাঙ্গার দাবী সর্বমহলে

48

খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসিফুড) ইকবাল বাহার চৌধুরী দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। সরকারি কর্মকর্তার লেবাসে তিনি যেন দুর্নীতির এক ‘পেশাদার কারিগর’। বদলি, চাল-আটা বরাদ্দ, ওএমএস ডিলার নিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই মোটা অংকের ঘুষ না দিলে কাজ মেলে না। শুধু খুলনা নয়, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খাদ্য বিভাগ যেন এক অন্ধকার কারখানা, যার অপারেটর এই ইকবাল বাহার।খাদ্য পরিদর্শক সেলিম রেজার একটি লিখিত অভিযোগে উঠে এসেছে ভয়াবহ সব চিত্র। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়, যার কপি পৌঁছায় দুদক, মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক ও প্রেস ক্লাব পর্যন্ত। অভিযোগে বলা হয়, সরকারি অফিস ৯টা-৫টা হলেও ইকবাল বাহারের অফিস সময় শুরু হয় সন্ধ্যার পর। তখনই শুরু হয় ‘ঘুষ-চালান’ লেনদেন।ওসিএলএসডিদের সঙ্গে নিয়মিত মিটিংয়ের নামে আদায় করা হয় লক্ষাধিক টাকা। পরিদর্শনে গেলে ২০ হাজার টাকার ‘ভিজিট ফি’, গাড়ির তেল বাবদ ৮ হাজার এবং ড্রাইভার মিনহাজের জন্য ২ হাজার টাকা না দিলে ‘প্রতিকূল’ রিপোর্ট দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এমনকি অনেক সময় স্ত্রীর সঙ্গে রিসোর্টে গিয়ে বিলাসবহুল আয়োজনও করিয়ে নেন ওসিএলএসডিদের পকেট থেকে। স্ত্রী ডা. লামিয়া নাহার রুমকির জন্য ভিআইপি মার্কেট থেকে শাড়ি কিনে দিতে হয় কর্মকর্তাদের।আরও ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, চাল বা গম সরানো, বরাদ্দের অনুমতি পাওয়ার জন্য নির্ধারিত হারে ঘুষ দিতে হয়। প্রতি বরাদ্দের জন্য দিতে হয় ৫০ হাজার টাকা, যার ১০ হাজার যায় অফিসের হিসাব রক্ষক শাহীন মোল্লার পকেটে। এসব ঘুষের টাকা পাঠানো হয় এসএ পরিবহন, কুরিয়ার সার্ভিস ও ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে।

 

ঢাকার ধানমন্ডির অভিজাত এলাকায় রয়েছে ইকবালের তিন কোটির ফ্ল্যাট, স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ অ্যাকাউন্টে রয়েছে পাঁচ কোটির সঞ্চয়। ঢাকার বসিলা, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লায় রয়েছে জমিজমা ও প্লট। তিনি তার জন্মদিনেও লাখ টাকার উপহার নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ওসিএলএসডিদের জোর করে উপহার দিতে বাধ্য করা হয়, যার মধ্যে ছিল ডায়মন্ড রিং, রোলেক্স ঘড়ি, স্বর্ণের আংটি ইত্যাদি।এর আগেও ইকবাল বাহার চৌধুরী পাবনা, জয়পুরহাট, ময়মনসিংহে ডিসি ফুড থাকা অবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগে প্রত্যাহার হয়েছিলেন। মুক্তাগাছায় ৩০০ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের মামলাও এখনো চলমান।

 

খুলনা খাদ্য বিভাগে এখন তোলপাড় অবস্থা। ঘুষের রাজত্বে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়ছে, আর জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা পড়ছে হুমকির মুখে। ফ্যাসিস্ট সরকারি ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এই দুর্নীতির সাম্রাজ্য ভাঙার দাবি উঠেছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে, আর কতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন ইকবাল বাহার চৌধুরী?

রোববার বেলা ১১টায় খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে যোগাযোগ করলে খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসিফুড) ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, বদলি নিয়ে কেউ কারো পছন্দের জায়গা না পেলে তারা মনক্ষুন্ন হয়ে এসব অভিযোগ করছে। এ সবই ভিত্তিহীন।

 

পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, কাউকে টপকায়ে নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পেয়েছি। আমার আরো উপরে থাকার কথা কিন্তু তা হয়নি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.