গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। অনাহারে একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ছয় সপ্তাহ বয়সি এক নবজাতক শিশুও। আল জাজিরার বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় খাদ্য সংকট ও দারিদ্র্য চরম আকার ধারণ করেছে। প্রাণ হারানো শিশুটির নাম ইউসুফ আবু জাহির। তার মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র দুধের অভাবে। শিশুটির চাচা আদহাম আল-সাফাদি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, “বাজারে দুধ পাওয়া যাচ্ছে না। আর কোথাও পাওয়া গেলেও একটি ছোট কৌটার দাম উঠেছে ১০০ ডলার পর্যন্ত।”
আল জাজিরা আরও জানায়, মঙ্গলবার যারা অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আরও তিন শিশু রয়েছে। তাদের একজন ১৩ বছর বয়সি আব্দুলহামিদ আল-ঘালবান। তিনি মারা যান গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অপুষ্টি ও অনাহারে প্রাণ গেছে কমপক্ষে ১০১ জনের, যার মধ্যে ৮০ জনই শিশু। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটেছে সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গত মার্চে ইসরাইল গাজায় সকল ধরনের পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিলে খাদ্য মজুত ফুরিয়ে যায়। পরবর্তীতে মে মাসে সীমিত সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এই সহায়তা বিতরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
কিন্তু সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে বহু মানুষকে। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়, এসব সহায়তা কেন্দ্রের কাছে গিয়েই মে মাসের পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “জিএইচএফ-এর সহায়তা বিতরণ পদ্ধতি এক ধরনের ‘নৃশংস মৃত্যুফাঁদ’। সহায়তার অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে, যেন তাদের হত্যার বৈধতা দেওয়া হয়েছে।”