কয়রার মাঠে মাঠে চলছে রোপা আমন আবাদের ধুম
ফরহাদ হোসেন, কয়রা(খুলনা)প্রতিনিধি:বর্ষার পানি জমেছে মাঠে, সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে আমন ধানের রোপণ কাজ। আর সেই রোপণ কাজকে ঘিরে কয়রার গ্রামীণ জনপদে বইছে এক উৎসবের আমেজ।
কৃষাণ-কৃষাণীরা গানের তালে তালে দল বেঁধে নেমে পড়েছেন জমিতে। বৃষ্টির পানিতে ভেজা কাদা-মাখা মাঠ যেন তাদের শ্রম ও সুরের মিলনে পরিণত হয়েছে এক প্রাণবন্ত দৃশ্যে।
প্রখর রৌদ্র আর বৃষ্টি উপক্ষে করে খুলনার কয়রা উপজেলায় রোপা আমন আবাদের ধুম পড়েছে। আমন মৌসুমকে সামনে রেখে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বীজতলা থেকে চারা তোলা, জমি চাষ করা, ও ধান রোপণে কৃষকরা ব্যাস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে যানা যায় কয়রায় চলতি আমন মৌসুমে ১৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষাবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ১৭০ হেক্টর বেশি।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমনের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে মাঠে মাঠে আধুনিক প্রযুক্তি কলের লাঙ্গল দিয়ে জমিতে চাষ দেয়ার দৃশ্য। খন্ড খন্ড জমিতে সারিবদ্ধভাবে শ্রমিকের চারা উত্তোলনের পর রোপনের শৈল্পিক চিত্র এ যেন আবহমান গ্রাম বাংলার চিরাচায়িত রুপ।
কয়রা সদরের কৃষক আব্দুল ওহাব বলেন, আমাদের সারা বছরের খাবার এই আমনের ওপর নির্ভর করে।কষ্ট করে ফসল ফলাতে পারলে সারা বছর বসে খেতে পারবো। তবে গান গাইতে গাইতে কাজ করলে কাজে ক্লান্তি কম লাগে।
কৃষক আল মামুন বলেন,বোরোসহ অন্যান্য ফসলের আবাদে সেচ, কীটনাশক, বীজ কেনাসহ নানা খাতে কৃষকের উৎপাদন বেশি খরচ পড়ে। রোপা আমন ধান চাষে সেচ খরচ নেই। বৃষ্টির কারণে কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়াও নিড়ানি খরচ একেবারেই কম। এ কারণে এসব এলাকার কৃষক বর্ষা মৌসুমে রোপা আমন ধানের চাষ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে রোপা আমন আবাদে কৃষকের জন্য লাভজনক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কৃষক হোসেন আলী বলেন, সার কিটনাশকের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে, আবার শ্রমিক খরচ ও অনেক বেশি ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে প্রায় ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। সমিতি থেকে লোন নিয়ে ধান চাষে নেমেছি ভালো ফলন না পেলে মাঠে মারা যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন , এরই মধ্যে উপজেলার প্রায় অর্ধেক ফসলি জমিতে রোপা আমন ধান চাষ শেষ হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে রোপা আমন আবাদের প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও চারা বীজের সংকট না থাকায় কৃষক রোপা আমন ধান আবাদে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
তিনি আরও বলেন, এবার রোপা আমন চাষের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৫শ হেক্টর যেটা অর্জনে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।